রাজপথে

চলন্ত কোলাহল প্রখর তপ্ত রৌদ্র,
ছায়াহীন ফুটপাতে আমিও চলন্ত একা-
গতিময় নক্ষত্রের মতঃ বিচিত্র রূপের
সন্দিহান দৃষ্টির মাঝপথে, বাঁকা
চাঁদের সুকোমল তীক্ষ্ণ আলোক
যেমন সহসা ঠিকরে এসে পড়ে
জানালার বিলিমিলিপথে। লোক
লোকারণ্যের রাজপথে আমিও তেমনি
শতাব্দীর বুভুক্ষু তৃষ্ণা বয়ে চলি।

চলন্ত যন্ত্রদানবগুলো আশ্চর্যভাবে
উদ্ভাসিত করেছে বিজ্ঞানের চরম সার্থকতা,
কিন্তু আমিযে দেখছি এই প্রাচুর্যময়
অঙ্গসজা আর যান্ত্রিকতার মধ্যে স্পষ্ট নিরবতা
ঠিক অচেনা প্রিয়ায় বিদায়বেলার
অস্পষ্ট অস্ফুট বেদনা, আমি জানি-
এই গতি এই রাজপথ- চলন্ত মানুষ
প্রত্যেকেই আপন কর্মে নিমজ্জিত।

প্রকৃতির অজস্র সৌরভ উপভোগের
উপযুক্ত সময় কোথায়, শুধু নিয়মের
অমোঘ আকর্ষনে আমরা চলি
কথা বলি, হাসি সুন্দরভাবে
তাও অন্তর হতে নয়, কর্তব্যে।

শ্যামল পল্লীর মনোহর শোভা
আমরা পারি না ভাবতে, কারন-
পৃথিবীর সুতীক্ষ্ণ গতি আজ চন্দ্রের দিকে
অনাহারীর দিকে দিকপাত করবে কখন,-
অথচ আপন বুকে তার অস্তিত্ব।

রাস্তার একপাশে মৃতপ্রায় নগ্ন
আনবিক মানবের সহোদর- অথচ
বাঁচবার অধিকার তারো আছে-
কিন্তু বুকের উপর দিয়েই তার জঘন্য
পৈশাচিকতার বিদেশী তেলের
পোড়া গন্ধ উড়ায় বিদেশীরই গাড়ী
অথচ এই বাংলায়।

পৃথিবীর রং বদলে গেছে,
কালের নির্মমতা বেড়েছে দ্বিগুন-
উপযুক্তেরই একমাত্র স্থান আছে
প্রতিনিয়ত সংগ্রাম বাস্তবের সাথে
আমি তোমাদের একজন সঙ্গী
যারা অনাহারে মুমূর্ষ পঙ্গু,
আমি তোমাদেরও পথের একজন
নির্ভীক অবিচল সাধক তোমরা
যারা বাস্তবের সাথে সংগ্রামরত।
কারন আমি জানি আঘাত মুখ বুজে
সহ্য করলে দাঁড়াবে না পাশে কেউ-
ঘাতককে করতে হবে নির্মূল, আর
অবিচল ধৈর্যের সাথে চালাতে হবে সংগ্রাম।
ভাগ্য আর ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে
নির্মম কালের বুকে নিশ্চিত কখনই
যাবে না রাখা আপন পদচিহ,
আমার সৃষ্টিকর্তা যখন আমি
তখন ভাগ্যকেও গড়তে হবে আমাকে।

চোখের অশ্রু মুছে এবার এসো,
আমার সাথেই কাস্তে শাবল ধরো হাতে
ভিক্ষার থালার পরিবর্তে।
অপরের কথা আর নয় এবার চেনো
নিশ্চিতভাবে চিনতে চেষ্টা করো
হয়তো তোমার মাঝেও খুঁজে পাবে
নিউটন, শেলী, সুকান্ত অথবা নজরুলকে।