তোমার মাতৃত্ব

আমার ধূসর আকাশে তুমি বাসা বাঁধবে?
কল্পনার রাজহাঁস হয়ে!
কিম্বা পিয়ালের বনে
অসংখ্য বুনো পাতার মাঝে
একটি শ্বেত শুভ্র ফুল হয়ে
বিক্ষিপ্ত পথে পা ফেলতে ফেলতে
আজ তুমি বিষণ্ণ ক্লান্ত,
নুড়ির আঘাতে তোমার অপ্সরা পা দিয়ে
সিঁদুরের মত রক্ত ঝরে।
আকাশ হতে সেই কতদিন
বৃষ্টির চুমোরা আসে না;
চাতক চোখের দৃষ্টিকোন বেয়ে
অঝোরে অশ্রু ঝরে-
তুমিও কি কাঁদো?
বুনো কপোতীর মত নিঝুম রাতে।
সায়াহ্নের কালো কাকগুলো
দুটি পাখায় গান বয়ে আনে,
সন্ধ্যা আরতি শুধু তোমাকেই দিতে
বিথর তটিনীতটে দাঁড়াই একা।
কতটুকু দিয়েছি যুগযুগ হতে
ভাবিনি, পেয়েছি কতটুকু
তাই নিয়ে দুঃখ সুখ।
রাত্রির কনাগুলো বরষার মত
এন্ত মেঘলার পরশ দিয়ে
ঝরে ঝরে পড়ে-
বনানী, শাখা, ফুলে, মাঠে
কিম্বা রাখালের ঝাউ বনে।
আরো নিবিড় ওষ্ঠের তপ্ততা
আমি পাই আমার শিয়রে।
ক্লান্ত কতগুলি সুন্দর পাখি
উড়ে উড়ে নেচে নেচে
তাদের সুবর্ণ পাখার চকমকি
আর অঙ্গের কসরৎ দেখিয়ে
বসে পড়ে আমার আঁখির পাতায়।
তখন তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই
মালা দিতে পারি না
প্রথম বাসর রাতের।
এখন শুধু তুমি,
চারি পাশে আর কেউ নেই,
রাত্রির অরন্যতা অতি প্রখর
যেন পাখায় পাখায় লেপ্টে আছে।
রাত জাগা পাখির চোখে ঘুম,
হাসনু আমার শাড়ি খসে পড়েছে।
হালকা ধূসর মেঘের আঁচল
নক্ষত্রের আলপনা এঁকেছে।
আজ একাদশী দ্বিপহরেই তাই
চাঁদটা খসে পড়েছে,
বহুদূরে উঁচু শিমুল গাছটার
বুকের মাঝখানে।
দু’চারটা শিশিরের জোনাকী
উড়ে যাবার সময় তোমার
অলিয়ে পড়া চুল গুলোর
রামধনু এঁকে যায়।
এখন শুধু তুমি রাত্রির মত
একান্ত আপন।

তোমার শীতল বুকে চুমু দিয়ে
শুষে নেই সবটুকু সুধা,
আদি মাটির গন্ধে আমার আদিম
ক্ষুধার্ত হৃদয়টা জেগে ওঠে।
আমি নিকট আপন।
দেখি জোছনারাতের চেয়ে
তোমার স্নেহের পরশটুকু।
আরো প্রখর উজ্জ্বল।
হাসনু হানার গন্ধের চেয়ে
তোমার বুকে ঘর্মাক্ত
সেঁদেল শব্দ আমার ভাল লাগে না,
নিশ্চুপ দুপুরে স্রোতোর পাশে
সুগন্ধ হয়ে শুনি তার গান।
কুমারীর মত মিষ্টি হাসলে
তোমার একটুও ভাল লাগে না,
যৌবনের সোপনে তুমি তো
অনেক আগে পা দিয়েছে,
এখন শুনে দুগ্ধ এসেছে
জঠরের সন্তান কেঁদে ওঠে
ভূমিষ্ঠেরা চারি পাশে বুভুক্ষু
বস্তনবৃন্ত তুলে ধরো সুখে,
নয়ত তোমার মাতৃত্বের অবসান।

তোমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে
যখন অযোরে ঘুমাব
তখন তুমি ধীরে ধীরে ব’লো,
তোমার বিগত যৌবনের কথা।