বারবার ফিরে আসে

বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট,
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে-হাতে,
মিছিলে পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট।
বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার,
বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম।

আবার আসব ফিরে’ বলে সজীব কিশোর
শার্টের আস্তিন দ্রুত গোটাতে গোটাতে
স্লোগানের নিভাঁজ উল্লাসে
বারবার মিশে যায় নতুন মিছিলে, ফেরে না যে আর।
একটি মায়ের চোখ থেকে
করুণ প্লাবন মুছে যেতে না যেতেই
আরেক মায়ের চোখ শ্রাবণের অঝোর আকাশ হয়ে যায়।
একটি বধূর
সংসার-উজাড়-করা হাহাকার থামতে না থামতেই, হায়,
আরেক বধূর বুক খাঁ-খাঁ গোরস্থান হয়ে যায়,
একটি পিতার হাত থেকে কবরের কাঁচা মাটি
ঝরে পড়তে না পড়তেই
আরেক পিতার বুক-শূন্য-করা গুলিবিদ্ধ সন্তানের লাশ
নেমে যায় নীরন্ধ্র করবে।

বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট,
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।
উনিশ শো ঊনসত্তরের
তরুণ চিৎকৃত রৌদ্রে যে-ছেলেটা খেলত রাস্তায়,
বানাত ধুলোর দুর্গ, খেত লুটোপুটি নর্দমার ধারে
বিস্ময়ে দেখত চেয়ে ট্রাক, জিপ,
রাইফেল, টিউনিক, বেয়োনেট, বুট, হেলমেট,
এখন সে টলমল পদভরে শরিক মিছিলে।
লজনম্র যে-মেয়েটি থাকত আড়ালে সর্বক্ষণ,
যে ছিল অসূর্যম্পশ্যা, এখন সে ঝলসায় মিছিলে মিছিলে।
তাদের পায়ের নিচে করে জ্বলজ্বল নীল-নকশা নব্য সভ্যতার।

বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট,
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।
হতাশাকে লাথি মেরে, ভয়কে বেদম লাঠিপেটা করে
সবখানে স্লোগানের ফুলকি ছড়াই।
বারবার আমাদের হাত হয় উদ্দাম নিশান,
বারবার ঝড়ক্ষুব্ধ হই আমরা সবাই।
আমাকেই হত্যা করে ওরা বায়ান্নোর রৌদ্রময় পথে,

আমাকেই হত্যা করে ওরা
ঊনসত্তরের বিদ্রোহী প্রহরে,
একাত্তরে পুনরায় হত্যা করে ওরা আমাকেই,
আমাকেই হত্যা করে ওরা
পথের কিনারে
এভেন্যুর মোড়ে,
মিছিলে, সভায়-
আমাকেই হত্যা করে ওরা, হত্যা করে বারবার।
তবে কি আমার
বাংলাদেশ শুধু এক সুবিশাল শহীদ মিনার হয়ে যাবে?