বিপুলা পৃথিবী

একদিন সে এসে পড়েছিল এই ভুল মানুষের অরণ্যে।
হাতে তাদের গা ছুঁতে গিয়ে কর্কশ বল্কল লাগে বারে বারে।

আজ মনে হয় কেন সে গিয়েছিল।
সে কি ভেবেছিল তার চিকন মোহ উদ্ভিন্ন করে দেবে অন্ধকারের শরীর?
সে কি যেন মেঘলা জল কালো বনের মাথায়?
প্রতিটি পাতা তার নন্দন বরণ করে নেবে সবুজ কৃতজ্ঞতায়?
আঙুরের আভার মতো দৃষ্টি-ধুয়ে-দেওয়া প্রান্তবেলা?

আজ মনে হয় কেন সে ভেবেছিল?
সেই অরণ্যের মধ্যে সেও এক তামসী বৃক্ষ যে নয়, এই কি তার জীবন?

জরাজটিল অরণ্যে তার ঠাঁই হলো না,
ঠাঁই হলো না ভালোবাসার আকাশে।

সে নেমে থাকল মধ্যপথের অজস্র শূন্যের মাঝখানে।

নিঃসীম নিঃসঙ্গ শূন্যে কেঁপে উঠল হৃদয়,
ভয়ে জমজম করতে থাকল তার রাত্রির মতো হৃদয়।

আর এই রাত্রি দুলছে নিঃশব্দ বাদুড়ের মতো তাকে ঘিরে।
চোখে পড়ে তারই নিরন্ত কালোয় অন্ধ অরণ্যের মূঢ় গর্জন,
‘তাকে ঢেকে দাও’ ‘তাকে ঢেকে দাও’ রব করতে-করতে
ছিটকে বেড়ালো এধার থেকে ওধার,
খসে-পড়া নক্ষত্র বেজে রইল বুকের মাঝখানে,
‘তাকে চোখ দাও’ ‘তাকে চোখ দাও’ বলতে-বলতে
সীমানাহীন ভয়ে তার চোখ ঢাকল দু-হাতে।

আজ তুমি, যে-তুমি অপমান আর বর্জনের নিত্য পাওয়া নিয়ে
তবুও মুঠোয় ধরেছ আমাকে, আমাকেই, আমাকে

সেই তুমি আমার অন্ধ দু-চোখ খুলে দাও,
যেন সইতে পারি এই পৃথুলা পৃথিবী,
এই বিপুলা পৃথিবী, বিপুলা পৃথিবী …