দুঃখবতী মা

মা’র দুঃখগুলাের ওপর গােলাপ-জল ছিটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল,
যেন দুঃখগুলাে সুগন্ধ পেতে পেতে ঘুমিয়ে পড়ে কোথাও
ঘুমটি ঘরের বারান্দায়, কুয়াের পাড়ে কিম্বা কড়ই তলায়।
সন্ধেবেলায় আলতাে করে তুলে বাড়ির ছাদে রেখে এলে
দুঃখগুলাে দুঃখ ভুলে চাঁদের সঙ্গে খেলত হয়ত বুড়িছোঁয়া খেলা।

দুঃখরা মা’কে ছেড়ে কলতলা অবদি যায়নি কোনওদিন।
যেন এরা পরম আত্মীয়, খানিকটা আড়াল হলে বিষম একা পড়ে যাবেন মা;
কাদায় পিছলে পড়বেন, বাঘে ভালুকে খাবে, দুষ্ট জ্বিনেরা গাছের মগডালে
বসিয়ে রাখবে মা’কে-
দুঃখগুলাে মা’র সঙ্গে নিভৃতে কী সব কথা বলত…
কে জানে কী সব কথা

মা’কে দুঃখের হাতে সঁপে বাড়ির মানুষগুলাে অসম্ভব স্বস্তি পেত।
দুঃখগুলােকে পিড়ি দিত বসতে,
লেবুর শরবত দিত, বাটায় পান দিত,
দুঃখগুলাের আঙুলের ডগায় চুন লেগে থাকত…
ওভাবেই পাতা বিছানায় দুঃখগুলাে দুপুরের দিকে গড়িয়ে নিয়ে
বিকেলেই আবার আড়মােড়া ভেঙে অযুর পানি চাইত,
জায়নামাজও বিছিয়ে দেওয়া হত ঘরের মধ্যিখানে।
দুঃখগুলাে মা’র কাছ থেকে একসুতাে সরেনি কোনওদিন।

ইচ্ছে ছিল লােহার সিন্দুকে উই আর
তেলাপােকার সঙ্গে তেলাপােকা আর
নেপথলিনের সঙ্গে ওদের পুরে রাখি।
ইচ্ছে ছিল বেড়াতে নিয়ে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রের জলে, কেউ জানবে না,
ভাসিয়ে দেব একদিন
কচুরিপানার মত, খড়কুটোর মত, মরা সাপের মত ভাসতে ভাসতে দুঃখরা
চলে যাবে কুচবিহারের দিকে…
ইচ্ছে ছিল

দুঃখগুলাে মা’র সঙ্গে শেষ অবদি কবর অবদি গেছে,
তুলে নিয়ে কোথাও পুতে রাখব অথবা ছেড়া পুঁতির মালার মত ছুঁড়ব রেললাইনে, বাঁশঝাড়ে,
পচা পুকুরে। হল কই!
মা ঘুমিয়ে আছেন, মা’র শিথানের কাছে মা’র দুঃখগুলাে আছে,
নিশুত রাতেও জেগে আছে একা একা।