রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম
কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুবাদিত কাব্যগ্রন্থ যা ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে (১৩৬৬ বঙ্গাব্দের পৌষ) প্রথম সচিত্র প্রকাশিত হয়। এর চিত্রায়নে ছিলেন খালেদ চৌধুরী। এবং এর ভূমিকা লিখেন সৈয়দ মুজতবা আলী। প্রকাশিকা: জোহরা খানম, কলিকাতা। পরিবেশক: স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স, কলিকাতা। এতে মোট ১৯৭টি কবিতা রয়েছে। কবিতাগুলোর জন্য কবি কোনো শিরোনাম দেননি, তবে সংখ্যা দিয়ে ক্রমিক নাম্বার দিয়েছেন। তাই কবিতার প্রথম লাইনকে শিরোনাম হিসেবে ধরে আমাদের সাইটে প্রকাশ করা হলো।
সূচীপত্র
- রাতের আঁচল দীর্ণ করে
- আঁধার অন্তরীক্ষে বুনে যখন রুপার পাড় প্রভাত
- ঘুমিয়ে কেন জীবন কাটাস
- আমার আজের রাতের খোরাক তোর টুকটুক শিরীন ঠোঁট
- প্রভাত হলো। শারাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়-পুর
- ওঠো নাচো! আমরা প্রচুর করব তারিফ মদ-অলস
- তোমার রাঙা ঠোঁটে আছে অমৃত-কূপ প্রাণ-সুধার
- আজকে তোমার গোলাপ-বাগে ফুটল যখন রঙিন গুল
- শারাব আনো! বক্ষে আমার খুশির তুফান দেয় যে দোল
- আমরা পথিক ধূলির পথের, ভ্রমি শুধু একটি দিন
- ধরায় প্রথম এলাম নিয়ে বিস্ময় আর কৌতূহল
- রহস্য শোন সেই সে লোকের আত্মা যথায় বিরাজে
- স্রষ্টা যদি মত নিতে মোর- আসতাম না প্রাণান্তেও
- আত্মা আমার! খুলতে যদি পারতিস এই অস্থিমাস
- সকল গোপন তত্ত্ব জেনেও পার্থিব এই আবহাওয়ার
- ব্যথায় শান্তি লাভের তরে থাকত যদি কোথাও স্থান
- বুলবুলি এক হালকা পাখায় উড়ে যেতে গুলিস্তান
- রূপ-মাধুরীর মাথায় তোমার যেদিন পার
- সাকি! আনো আমার হাতে মদ-পেয়ালা
- নীল আকাশের নয়ন ছেপে বাদল-অশ্রুজল ঝরে
- করব এতই শিরাজি পান পাত্র এবং পরান ভোর
- দেখতে পাবে যেথায় তুমি গোলাপ লালা ফুলের ভিড়
- নিদ্রা যেতে হবে গোরে অনন্তকাল
- বিদায় নিয়ে আগে যারা গেছে চলে
- তুমি আমি জন্মিনিকো- যখন শুধু বিরামহীন
- প্রথম থেকেই আছে লেখা অদৃষ্টে তোর যা হবার
- ভালো করেই জানি আমি, আছে এক রহস্য-লোক
- চলবে নাকো মেকি টাকার কারবার আর, মোল্লাজি
- সবকে পারি ফাঁকি দিতে মনকে নারি ঠারতে চোখ
- মৃত্তিকা-লীন হবার আগে নিয়তির নিঠুর করে
- বলতে পার, অসার-শূন্য ভবের হাটের এই ঘরে
- খাজা! তোমার দরবারে মোর একটি শুধু আর্জি এই
- কাল কী হবে কেউ জানে না, দেখছ তো হায়, বন্ধু মোর
- প্রেমিকরা সব আমার মতো মাতুক প্রেমের মত্ততায়
- মানব দেহ- রঙে-রূপে এই অপরূপ ঘরখানি
- তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল এই পৃথিবীর এও মায়া
- দোষ দেয় আর ভর্ৎসে সবাই আমার পাপের নাম নিয়া
- মুসাফিরের এক রাত্রির পান্থ-বাস এ পৃথ্বীতল
- কারুর প্রাণে দুখ দিয়ো না
- ছেড়ে দে তুই নীরস বাজে দর্শন আর শাস্ত্রপাঠ
- অজ্ঞানেরই তিমির-তলের মানুষ ওরে বে খবর
- লয়ে শারাব-পাত্র হাতে পিই যবে তা মস্ত হয়ে
- শারাব ভীষণ খারাপ জিনিস মদ্যপায়ীর নেইকো ত্রাণ
- আমার কাছে শোন উপদেশ
- মউজ চলুক! লেখার যা তা লিখল ভাগ্য কালকে তোর
- আমি চাহি স্রষ্টা আবার সৃজন করুন শ্রেষ্ঠতর
- নাস্তিক আর কাফের বলো তোমরা লয়ে আমার নাম
- বদখশানী রক্ত-চুনির মতন সুরা চুঁইয়ে আন
- মসজিদ মন্দির গির্জায় ইহুদ-খানায় মাদ্রাসায়
- এক হাতে মোর তসবি খোদার, আর-হাতে মোর লাল গেলাস
- একমনি ঐ মদের জালা গিলব, যদি পাই তাকে
- বিষাদের ঐ সওদা নিয়ে বেড়িয়ো না ভাই শিরোপরি
- স্বর্গে পাব শারাব-সুধা
- রজব শাবান পবিত্র মাস বলে গোঁড়া মুসলমান
- শুক্রবার আজ, বলে সবাই পবিত্র নাম জুম্মা যার
- মসজিদের অযোগ্য আমি, গির্জার আমি শত্রু-প্রায়
- মুগ্ধ করো নিখিল-হৃদয় প্রেম-নিবেদন কৌশলে
- বিধর্মীদের ধর্মপথে আসতে লাগে এক নিমেষ
- হৃদয় যাদের অমর প্রেমের জ্যোতির্ধারায় দীপ্তিমান
- মদ পিয়ো আর ফুর্তি করো- আমার সত্য আইন এই
- এক সোরাহি সুরা দিয়ো, একটু রুটির ছিলকে আর
- হুরি বলে থাকলে কিছু- একটি হুরি
- যতক্ষণ এ হাতের কাছে আছে অঢেল লাল শারাব
- দোষ দিয়ো না মদ্যপায়ীর তোমরা
- খুশি-মাখা পেয়ালাতে ঐ গোলাপ-রক্ত মদ-মধুর
- চৈতি-রাতে খুঁজে নিলাম তৃণাস্তৃত ঝর্ণা-তীর
- সাকি-হীন ও শারাব-হীনের জীবনে হায় সুখ কী বলো
- মরুর বুকে বসাও মেলা
- শারাব এবং প্রিয়ায় নিয়ে, সাকি, হেথায় এলাম ফের
- নৃত্য-পাগল ঝর্ণাতীরে সবুজ ঘাসের ঐ ঝালর
- আমার ক্ষণিক জীবন হেথায় যায় চলে ঐ ত্রস্ত পায়
- আর কতদিন সাগরবেলায় খামকা বসে তুলব ইঁট
- মধুর, গোলাপ-বালার গালে দখিন হাওয়ার মদির শ্বাস
- শীত ঋতু ঐ হল গত বইছে বায় বসন্তেরই
- সরো’র মতন সরল-তনু টাটকা-তোলা গোলাপ-তুল
- পল্লবিত তরুলতা কতই আছে কাননময়
- আমার সাথি সাকি জানে মানুষ আমি কোন জাতের
- আরাম করে ছিলাম শুয়ে নদীর তীরে কাল রাতে
- মন কহে, আজ ফুটল যখন এন্তার ঐ গোলাপ গুল
- হায় রে, আজি জীর্ণ আমার কাব্য পুথি যৌবনের
- আজ আছে তোর হাতের কাছে
- হায় রে হৃদয়, ব্যথায় যে তোর ঝরছে নিতুই রক্তধার
- অর্থ বিভব যায় উড়ে সব রিক্ত করে মোদের কর
- পান করে যাই মদিরা তাই, শুনছি প্রাণের বেণুর রব
- ব্যথার দারু শারাব পিয়ো, ইহাই জীবন চিরন্তন
- সুরা দ্রবীভূত চুনি, সোরাহি সে খনি তার
- সুরার সোরাহি এই মানুষ, আত্মা শারাব তার ভিতর
- ব্যর্থ মোদের জীবনঘেরা কুগ্রহ সব মেঘলা প্রায়
- মদের নেশার গোলাম আমি সদাই থাকি নুইয়ে শির
- পেতে যে চায় সুন্দরীদের ফুল্ল-কপোল গোলাপ ফুল
- শারাব নিয়ে বসো
- ওগো সাকি! তত্ত্বকথা চার ও পাঁচের তর্ক থাক
- এক নিশ্বাস প্রশ্বাসের এই দুনিয়া রে ভাই
- কায়কোবাদের সিংহাসন
- এই যে প্রমোদ-ভবন যেথায় জলসা ছিল বাহরামের
- ঘরে যদি বসিস গিয়ে ‘জমহুর’ আর ‘আরাস্তু’র
- প্রেমের চোখে সুন্দর সেই হোক কালো কি গৌর-বরন
- খৈয়াম- যে জ্ঞানের তাঁবু করল সেলাই আজীবন
- সাত-ভাঁজ ঐ আকাশ এবং চার উপাদান-সৃষ্ট জীব
- খরাব হওয়ার শারাব-খানায় ছুটছি আমি আবার আজ
- এই কুঁজো- যা আমার মতো ভোগ করেছে প্রেম-দাহন
- দ্রাক্ষা সাথে ঢলাঢলির এই তো কাঁচা বয়স তোর
- সাবধান! তুই বসবি যখন শারাব পানের জলসাতে
- যদিও মদ নিষিদ্ধ ভাই, যত পার মদ চালাও
- তোমরা- যারা পান কর মদ আর সব দিন
- করছে ওরা প্রচার- পাবি স্বর্গে গিয়ে হুরপরি
- এই যে আঁধার প্রহেলিকা পারবিনে তুই পড়তে মন
- দোহাই! ঘৃণায় ফিরিয়ো না মুখ দেখে শারাব-খোর গোঁয়ার
- জীবন যখন কন্ঠাগত- সমান বলখ নিশাপুর
- আয় ব্যয় তোর পরীক্ষা কর ঠিক সে হিসাব করতে পেশ
- হঠাৎ সেদিন দেখলাম, এক কর্মরত কুম্ভকার
- একী আজব করছ সৃষ্টি, কুম্ভকার হে, হাত থামাও
- চূর্ণ করে তোমায় আমায় গড়বে কুঁজো কুম্ভকার
- এই যে রঙিন পেয়ালাগুলি নিজ হাতে যে গড়ল সে
- পিয়ালাগুলি তুলে ধরো চৈত্রী লালা ফুলের প্রায়
- মসজিদ আর নামাজ রোজার থামাও থামাও গুণ গাওয়া
- মৃত্যু যেদিন নিঠুর পায়ে দলবে আমার এই পরান
- রে নির্বোধ! এ ছাঁচে-ঢালা মাটির ধরা শূন্য সব
- তিরস্কার আর করবে কত জ্ঞান-দাম্ভিক অর্বাচীন
- মসজিদের ঐ পথে ছুটি প্রায়ই আমি ব্যাকুল প্রাণ
- নিত্য দিনে শপথ করি- করব তৌবা আজ রাতে
- আগে যে সব সুখ ছিল, আজ শুনি তাদের নাম কেবল
- আমরা শারাব পান করি তাই শ্রীবৃদ্ধি ঐ পানশালার
- তোমার দয়ার পিয়ালা প্রভু উপচে পড়ুক আমার পর
- আমায় সৃজন করার দিনে জানত খোদা বেশ করেই
- দুঃখে আমি মগ্ন প্রভু
- দয়ার তরেই দয়া যদি
- আড্ডা আমার এই যে গুহা, মদ চোলাই-এর এই দোকান
- দেখে দেখে ভণ্ডামি সব হৃদয় বড়ো ক্লান্ত ভাই
- স্যাঙাৎ ওগো, আজ যে হঠাৎ মোল্লা হয়ে সাজলে সং
- পানোন্মত্ত বারাঙ্গনায় দেখে সে এক শেখজি কন
- হাতে নিয়ে পান-পিয়ালা নামাজ পড়ার মাদুরখান
- কালকে রাতে ফিরছি যখন ভাঁটিখানার পাঁড় মাতাল
- হে শহরের মুফতি! তুমি বিপথ-গামী কম তো নও
- ভন্ত যত ভড়ং করে দেখিয়ে বেড়ায় জায়নামাজ
- ধূলি-ম্লান এ উপত্যকায় এলি, এসেই হলি গুম
- সুন্দরীদের তনুর তীর্থে এই যে ভ্রমণ, শারাব পান
- এই মূঢ়দল- স্থূল তাহাদের অজ্ঞানতার ঘোর মায়ায়
- মার্কা-মারা রইস যত- ঈষৎ দুখের বোঝার ভার
- দরিদ্রেরে যদি তুমি প্রাপ্য তাহার অংশ দাও
- জ্ঞান যদি তোর থাকে কিছু- জ্ঞানহারা হ সত্যিকার
- যার পরে তোর আস্থা গভীর
- দাস হোয়ো না মাৎসর্যের, হোয়ো নাকো অর্থ-যখ
- যোগ্য হাতে জ্ঞানীর কাছে ন্যস্ত করো এই জীবন
- সেরেফ খেয়াল-খুশির বশে আপন জনের বক্ষে তুই
- ধীর চিত্তে সহ্য করো
- আকাশ পানে হতাশ আঁখি
- দশ বিদ্যা, আট স্বর্গ, সাত গ্রহ আর নয় গগন
- কী হই আর কী নই আমি
- একদা মোর ছিল যখন
- আসিনি তো হেথায় আমি আপন স্বাধীন ইচ্ছাতে
- ঘেরাটোপের পর্দা-ঘেরা দৃষ্টি-সীমা মোদের ভাই
- আমার রোগের এলাজ করো
- পেয়ালার প্রেম যাচ্ঞা করো
- অঙ্গে রক্ত-মাংসের এই পোশাক
- কইল গোলাপ, মুখে আমার
- হৃদয় ছিল পূর্ণ প্রেমে
- ইয়াসিন’ আর ‘বরাত’ নিয়ে
- ভূলোক আর দ্যুলোকেরই মন্দ ভালোর ভাবনাতে
- এই নেহারি- নিবিড় মেঘে
- আমরা দাবা খেলার ঘুঁটি
- আশমানি হাত হতে যেমন
- চাল ভুলিয়ে দেয় রানি মোর
- আশমানে এক বলীবর্দ রয়
- শ্রেষ্ঠ শারাব পান করে নেয়
- রূপ লোপ এর হয় অরূপে
- লাল গোলাপে কিস্তি দিয়ে
- তোমার-আমার কী হবে ভাই
- ঘূর্ণমান ঐ কুগ্রহ-দল
- ফিরনু পথিক সাগর মরু
- দুই জনাতেই সইছি সাকি
- স্রষ্টা মোরে করল সৃজন
- দুর্ভাগ্যের বিরক্তি পান করতে
- ওমর রে, তোর জ্বলছে হৃদয় হয়তো
- কুগ্রহ মোর! বলতে পারিস
- জল্লাদিনি ভাগ্যলক্ষ্মী
- ভাগ্যদেবী! তোমার যত লীলাখেলায়
- সইতে জুলুম খল নিয়তির
- মোক্ষম বাঁধ বেঁধেছে যে
- মানুষ খেলার গোলক প্রায়
- খামকা ব্যথার বিষ খাসনে
- সিন্ধু হতে বিচ্ছেদেরই দুঃখে কাঁদে বিন্দুজল
- আমার রানি
- তোমার আদরিণী বধূ ছিল
- যেমনি পাবি মন দুই মদ
- মানব-স্বভাব জড়িয়ে বহে
- তোমার নিন্দা করতে
- বলতে পার! টক সে কেন আঙুর
- খ্যাতির মুকুট পরলে হেথায়
- খৈয়াম! তুই কাঁদিস কেন পাপের ভয়ে
- আবার যখন মিলবে হেথায়
- বিশ্ব-দেখা জামশেদিয়া পেয়ালা
- আকাশ যেদিন দীর্ণ হবে
- হৃদয় যদি জীবনে হয়
- খৈয়াম! তোর দিন দুয়েকের এই যে দেহের শামিয়ানা
- পৌঁছে দিয়ো হজরতেরে খৈয়ামের হাজার সালাম
- তত্ত্ব-গুরু খৈয়ামেরে পৌঁছে দিয়ো মোর আশিস