বন্যা

আবার এসেছে বন্যা, চারদিক জমজমাট হ’য়ে উঠবে পুনরায়।
সুখপাঠ্য হ’য়ে উঠবে অপাঠ্য দৈনিকগুলো,
গদশ্রান্ত সাংবাদিকদের পিচ্ছিল কলম থেকে
নিষ্ক্রান্ত হবে অভাবিত চিত্রকল্পমণ্ডিত কবিতাআক্রান্ত গদ্য,
সরকারি সম্পাদকের সুখ্যাত সৌন্দর্যবোধ
অবিনশ্বর ক’রে রাখবে অফসেটে ছাপা চিত্রাবলি।

আবার এসেছে বন্যা, বাঙলাদেশে শিল্পের মৌশুম।
বিশ্ব স্থিরচিত্র প্রতিযোগিতায় যে-ছবিটি প্রথম পদক পাবে
আগামী বছর, আশাহি পেন্টাক্সে সেটি
তুলে আনবেন শিল্পপ্রাণিত কোনো বাঙালি ফটোগ্রাফার,
শহরের সবচে অপাঠ্য দৈনিকটি, আগামী মাসেই,
টেলেক্সে লণ্ডনে দেবে লাইনো মেশিন অর্ডার।
টেলিভিশন পুনরায় বোধ করবে কবিতার প্রয়োজন,
ক্যামেরার মুখোমুখি বসবে আসর, হয়তো আমিই হবো
বন্যা ও কবিতার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণকারী
দুর্দান্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ গম্ভীর উপস্থাপক,
এবার কেবলমাত্র ক্যামেরামুখ কবিদেরই
আমন্ত্রণ জানাবে প্রযোজক।
আবার এসেছে বন্যা, আবার দেখতে পাবো পথেপথে
শোকভারাতুর সেবিকাপুঞ্জের ক্ষুধাহর, আশ্রয়-ইশারাভরা
পদ্মার ঢেউয়ের মতো ঢেউভরা মেদ,
আনন্দমুখর হবে সন্ধ্যাগুলো- দয়াবতী প্রধান বেশ্যার নাচ
ওয়েসিসে, আন্তর্জতিক কাঁপবে লাস্যময়ী গায়িকার
তীব্র শ্রোণিভারে।
আবার এসেছে বন্যা, ইতর গ্রাম্যলোক কাছে থেকে দেখতে পাবে
সুবেশ, সভ্যতা, কপ্টার, লাল ওষ্ঠ, বিলিতি কম্বল,
সেবাময়ীদের উদ্ধত বক্ষ ও জংঘার নিপুণ আর
তীক্ষ্ণ আন্দোলন।
আবার এসেছে বন্যা, ক্ষমতার উৎস যারা তারা খুব কাছে থেকে
দেখতে পাবে ক্ষমতার পরিণতিদের, এবং বুঝতে পারবে
ক্ষমতার পরিণতি কী-রকম শোকাবহ করুণ ব্যাপার।
আবার এসেছে বন্যা, গৃহবন্দী রাজনীতিবিদদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
এইতো সুযোগ। এবং সুযোগ তার- হ্যান্ডশেক, পচা গম,
আণ্ডার সমান অশ্রুবিন্দু, দ্রোহীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি-
পাকা সিংহাসন।
আবার এসেছে বন্যা, বাঙলার সোনালি মৌশুম।