চিল

নেবুতলার একটা বাড়ির
ছাদের ওপরে
একটা লম্বা বাখারির শিষে
যেখানে আকাশপ্রদীপ দেওয়া হত
একটা চিল এসে বসেছে
সমস্তটা সকাল সেখানে ব’সে
সমস্তটা দুপুর
ঘাড় কাত ক’রে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে
ওপরে এশিয়ার আকাশ কী নীল
সেখানে তার সন্তানেরা উড়ছে আজ
তাদের এক দিন সে উড়তে শিখিয়েছিল
-দূর-কল্পিত
আজ তারা আর্টিস্ট- আর সে এক জন
মানুষ- আর্টিস্টের কবিতার বিষয় শুধু
আজ তার পাখা ভারী
শরীরটা একটা (ত্যক্ত উপেক্ষিত) বাঁশের গুঁড়ির মতো
সে বুড়ো হয়ে গেছে
একপাল কাক এসে তাকে নিয়ে একটু মজা করতে চায়
পায়রাগুলো কানের কাছ দিয়ে ঘেঁষে উড়ে যায়
চড়ুই দু’-একটা ভাঁড়ামি করতে থাকে
কিন্তু এ-সব নিষ্ফলতা চুপে-চুপে সহ্য ক’রে যাচ্ছিল সে
চিলরা এ-রকম সহ্য করে
কিন্তু ব্যথা এই: একটা শুকনো বাখারির আর
একটা অপরিসর ছাদের
এই ধোঁয়া-ধুলো ও হাঁসফাঁসের ভিতর
এই নিচের পৃথিবীতে
সমস্ত দুপুর সে এক জন কবির কাছে মডেলের মতো বসল
যখন তার সন্তানেরা আর্টিস্টের মতো আকাশে-আকাশে উড়ছে
এশিয়ার নীল আকাশে
যখন কবি এই চিলপিতার নিঃসহায়তা
নিয়ে একটা স্বতঃস্ফূর্ত কবিতা লিখছে
একটা কবিতা যার স্বাধীনতা ও উৎসাহ এশিয়ার দুর্নিবার আকাশে
একটা কিশোর চিলের মতো
একটা কবিতা যার আবেগ ও আয়োজন কবিকে
আকাশে-আকাশে উড়িয়ে দিয়েছে যেন
আকাশের থেকে আকাশে-আকাশে

ভারী হৃদয় ভারী পাখার চেয়েও ভারী হয়ে উঠছে
এই চিলের
(যে-দিন আর্টের আবেগ আমাকে ছেড়ে দেবে
আমিও চিলের মতো হব)
(কিম্বা-)
আমিও এক দিন
এই চিলের মতো হব
(যে-দিন হৃদয়ে কোনও কবিতা আসে না
জীবনে কোনও আর্ট নেই)