চিত্রশরৎ

এই যে ছিল সোনার আলো ছড়িয়ে হেথা ইতস্তত,-
আপনি খোলা কম্লা-কোয়ার কম্লা-ফুলি বোয়ার মত,-
এক নিমেষে মিলিয়ে গেল মিশমিশে ওই মেঘের স্তরে,
গড়িয়ে যেন পড়ল মসী সোনায় লেখা লিপির পরে।

আজ সকালে অকালেরি বইছে হাওয়া, ডাকছে দেয়া,
কেওড়া জলের কোন্ সায়রে হঠাৎ নিশাস ফেললে কেয়া;
পদ্মফুলের পাপড়িগুলি আসছে ভরে আলোক বিনে,
অকালে ঘুম নাম্ল কি হায় আজকে অকাল-বোধন দিনে!

হাওয়ার তালে বৃষ্টিধারা সাঁওতালী নাচ নাচতে নামে,
আবছায়াতে মূর্ত্তি ধরে, হাওয়ায় হেলে ডাইনে বামে;
শূন্যে তারা নৃত্য করে, শূন্যে মেঘের মৃদং বাজে,
শাল-ফুলেরি মতন ফোটা ছড়িয়ে পড়ে পাগল নাচে।

তাল-বাকলের রেখায় রেখায় গড়িয়ে পড়ে জলের ধারা,
সুর-বাহারের পর্দা দিয়ে গড়ায় তরল সুরের পারা!
দীঘির জলে কোন্ পোটো আজ আঁশ ফেলে কী নক্সা দেখে,
শোল্-পোনাদের তরুণ পিঠে আলপনা সে যাচ্ছে এঁকে!

ডাল্পালাতে বৃষ্টি পড়ে, শব্দ বাড়ে ঘড়িক্-ঘড়ি,
লক্ষ্মীদেবীর সামনে কারা হাজার হাতে খেল্ছে কড়ি!
হঠাৎ গেল বন্ধ হ’য়ে মধ্যিখানে নৃত্য খেলা,
ফেঁসে গেল মেঘের কানাৎ উঠল জেগে আলোর মেলা।

কালো মেঘের কোল্টি জুড়ে আলো আবার চোখ চেয়েছে!
মিশির জমী জমিয়ে ঠোঁটে শরৎ-রাণী পান খেয়েছে!
মেশামিশি কান্নাহাসি, মরম তাহার বুঝ্বে বা কে?
এক চোখে সে কাঁদে যখন আরেক্টি চোখ্ হাসতে থাকে!