সমুদ্রাষ্টক

সিন্ধু তুমি বন্দনীয়, বিম্ব তুমি মাহেশ্বরী;
দীপ্ত তুমি, মুক্ত তুমি, তোমায় মোরা প্রণাম করি।
অপার তুমি, নিবিড় তুমি, অগাধ তুমি পরাণ-প্রিয়।
গহন তুমি, গভীর তুমি, সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

সিন্ধু তুমি, মহৎ কবি, ছন্দ তব প্রাচীন অতি;-
কণ্ঠে তব বিরাজ করে ‘বিরাট-রূপা সরস্বতী’।
আৰ্য তুমি বীর্য্যে বিভু, ঝঞ্ঝা তব উত্তরীয়;
মন্দভাষী ইন্দু-সখা, সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

সিন্ধু তুমি প্রবল রাজা, অঙ্গে তব প্রবাল-ভূষা,
যত্নে হেম-নিষ্ক-মালা পরায় তোমা সন্ধ্যা-উষা!
স্বাধীন-চেতা মৈনাকেরে ইন্দ্র-রোষে অভয় দিয়ো;
উপপ্লবে বন্ধু তুমি, সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

তমাল জিনি বরণ তব, অঙ্গে মরকতের দ্যুতি,
কর্ণে তব তরঙ্গিছে গঙ্গা-গোদাবরীর স্তুতি;
নর্ম্মসখী নদীর যত অধর-সুধা হর্ষে পিয়ো।
লাস্যগতি, হাস্যরতি, সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

দিগ্গজেরা তোমার পরে নীলাজ্বেরি ছত্র ধরে,
আচ্ছাদিত বিপুল বপু বলদেবের নীলাম্বরে;
ক্ষুব্ধ ঢেউই লাঙল তব মুষলধারী হে ক্ষত্রিয়!
অঙ্গরী সে অঙ্কশোভা; সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

উদয়-লয়ে ছন্দে গাঁথ কর্ম্মী তুমি কৰ্ম্মে হারা;
সাগর! ভবসাগর তুমি, তুমি অশেষ জন্মধারা;
তোমার ধারা লভে যারা তাদের কাছে শুল্ক নিয়ো,
শাসন কর, পালন কর, সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

মেঘের তুমি জন্মদাতা, প্রাবৃট তব প্রসাদ যাচে,
বাড়ব-শিখা তোমার টীকা, জগৎ ঋণী তোমার কাছে,
রত্ন ধর গর্ভে তুমি, শস্যে ভর ধরিত্রীও,
পন্থা- পদ-চিহ্ন-হরা; সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।

উগ্র তুমি বাহির হ’তে, ব্যগ্র তুমি অহর্নিশি,
অন্তরেতে শান্ত তুমি আত্মরতি মৌনী ঋষি।
তোমায় কবি বর্ণিবে কি? নও হে তুমি বর্ণনীয়,
আকাশ-গলা প্রকাশ তুমি, সিন্ধু তুমি বন্দনীয়।