পত্র – ১০

20, Narkeldanga Main Road
Calcutta
15.2.43

প্রীতিভাজনেষু

আমি কিছুদিন আগে একটা বিপুলবপু চিঠিতে অজস্র বাসে কথা লিখে পাঠিয়াছিলাম- নেহাৎ চিঠি লেখার জন্যেই। সেখানা হস্তগত হয়েছে শুনে নির্ভয় হলাম। ও চিঠির উত্তর না- পাওয়া আমায় বিচলিত করে নি, যেহেতু ঐ চিঠিটার উত্তর দেবার মতো মূল্য ছিল না। আমার খবর আমি একে কথায় জানাচ্ছি- পরিবর্তনহীনভাবে রাজনীতি নিয়ে কালক্ষয় করছি। তোরা একটা ‘পত্রিকা’ ১৮ বার করছিস। ভাল কথা। কিন্তু প্রশ্ন এই, হাতের-লেখা পত্রিকা বার করবার মতো মনের অপরিপক্কতা তোর আজো আছে? কথাটা নীসর হলেও একথা বলবই যে, এই ধরনের ‘খই ভাজায়’ এই দুর্দিনে কাগজ ও সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। নিজের সম্বন্ধে তোর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেকে নানাভাবে সৎশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং সেইজন্য পত্রপাঠ কলকাতা এসে বাবার সাহায্য নেওয়া। কথাটা গুরুমশায়ের উপদেশ অথবা বাবার নিবেদনের মতো তিক্ত ও অনাবশ্যক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কথাটা সত্যি। কথাটার তাৎপর্য আমি মর্মে মর্মে অনুভব করছি এবং যথাসাধ্য সে সম্বন্ধে চেষ্টা ও আয়োজন করছি। অতএব আমার কথাটা ভাল করে ভেবে দেখবার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি, মা এবং ভাই-বোনসহ তুই ভাল আছিস : তোর প্রীতিপ্রাপ্তরা ভাল আছে, চিঠির উত্তর চাই না।

-সুকান্ত ভট্টাচার্য।