পরমা

তোমার তনিমার নব নীড়ে
একদা লভেছিনু অবনীরে।
নাহি-যে পরিমাণ;
কেমনে করি পান
জীবন-মন্থন নবনীরে।

বেঁধেছি যত সুর বীণাতারে,
সে তব পরশের ঘনতারে
ছন্দে বন্দিয়া
রাখিতে বন্ধিয়া
আকুলা একেলার মনোহারে।

সে-সুখকোমলতা নবনীত
আজিকে হলো বুঝি অবসিত।
রহিলো প’ড়ে নীড়;
নিখিল-ঘরনীর
নীলিমা ছায়াপথে অবারিত।

ছাড়ায়ে রভসের খরতারে
এসেছি পরশের পরপারে।
দেহ তো শুধু সীমা;
বিরহ-সুদূরিমা
লঙ্ঘে মিলনের মরতারে

দু’জনে অনিকেত দু’জনেরে
একেলা একেলারে খুঁজে ফেরে।
আমার যে-আপন
করিছে সমাপন
প্রথম নীড়ে-শেখ কূজনেরে।

এ-বীণা নহে আর সুখ-রতা,
কোথা সে-পুলকিত মুখরতা।
অরবে উছলায়
এ-সুর যে-ছলায়
আকাশে ভাষা তার অবিরতা।

যেখানে ভালোবাসা রূপ নিতে
তাহারও পরে গান উপনীত।
কখনো জ্যোছনায়
মাধুরী-রচনায়
সহসা হবে প্রাণে স্বপনিত।
যদি-বা ভুলে যাও অতীতেরে
এ-গান জড়াবে না স্মৃতি-ঘেরে।
কেবল নিরজনে
লভিবে নিজ মনে
সুরের রথে চির-অতিথিরে।

বঁধু, এ-অভিসার অভিনব,
আঁধারে মিশে যায় ছবি তব।
মুছিয়া সব রূপ
এলে যে-অপরূপ
মন্ত্রে তারই আমি কবি তব।

আঁধার-তলে জ্বলে অনিমিখা
তুলনাহীনা তব কনীনিকা।
প্রভাতে প্রথমা সে,
নিশীথে পরমা সে,
মাটির দেহ-দীপে মণি-শিখা।