পথের শপথ

ব্যর্থ হয়েছে দিন,
রাত্রি আমার বৃথা;
আসে নাই তুমি আসো নাই।
স্বপ্নেই হলো লীন
স্বপ্নের পরিচিত;
বাসা নাই তার বাসা নাই।
বিরতিবিহীন কাল
চল্লিশে দিলো তাল-
আশা নাই আর আশা নাই।

ছিলো আশা ছিলো কুটিল আঁখির আখরে,
ছিলো বাসা ছিলো বিকচ বুকের চূড়ায়, সুখের শিখরে;
মনে হয়েছিলো কতবার, যেন চপল চোখের ব্যাকুল রেখায়
অশ্রু-হাসির ছল ক’রে শুধু তোমারে দেখায়;
মনে হয়েছিলো ঘনচুম্বন-ফেন-উচ্ছল আধার-আধার
সে শুধু উপায়, শুধু উপচার তোমারে সাধার;
মনে হয়েছিলো তড়িৎ-পরশ লাজুক আঙুলে, উদ্বেল চুলে,
চুলের ঢেউয়ের কোঁকড়া কুলায়ে
তোমারেই যেন আনলো ভুলায়ে
আমার ব্যগ্র মত্ত অধীর হাতের মুঠোয়;
তোমার আকাশে অদ্ভুত যত চাঁদ ফোটে, তারা নারী হ’য়ে যেন
আমার ঘুমের প্রান্তে লুটোয়-
তনুর ধনুতে কানে-কানে টেনে ছিলো
মুগ্ধ, অবোধ, অমর অতনু
যখন করেছে লীলা।

দিনে দিনে মোর পূর্ণ হয়েছে
যখনই যে-কোনো বাসনা,
মনে-মনে তারই অনুকম্পনে
শুনেছি তোমার ভাষণ।
আজ চল্লিশে এসে দেখি শেষে
আসে নাই তুমি আসো নাই।

আজকে দেখছি আশা ঝ’রে গেছে, বাসা ভেঙে গেছে, আছে শুধু আছে
ভাষা,

আর আছে ভালোবাসা।
তৃপ্ত হয়েছে শতবর্ষের উপবাসী দেহ, পূর্ণ হয়েছে প্রাণ,
তবু গাণ, কেন গান?
যে-ভালোবাসায় বিবশ, বিশ্বে জড়ায়ে ধরেছি বুকে
স্বর্গ-নরকে উজাড়ি’ পলকে ক্ষণিক দুঃখে-মুখে,
যে-ভালোবাসার হৃৎস্পন্দনে দুঃসাহসের হাত
ভেঙেছে সকল গতানুগতির বাঁধ-
সে-ভালোবাসার দান
এখনও হয়নি শেষ,
এখনও আমার গান
জেগে আছে অনিমেষ।

আজও যায় ডেকে চুপে-চুপে সে কে,
কেঁপে-কেঁপে ওঠে প্রাণ,
পেয়ে কার সাড়া হ’লে নীড়হারা
আজও গান, মোর গান?
জানি, সে তোমারই অসীম, অপার,
অপরশ মধুরিমা,
কথা-বোনা পাড়ে আজও চাই যারে
পরাতে রূপের সীমা।
যুবক বয়সে ভেবেছি, তোমার
কোনো দেহে আছে বাসা,
আজ চল্লিশে এসে দেখি শেষে
সে-বাসা আমারই ভাষা।
ভাষার যে-পথে নিত্য চালায়
ভালোবাসা তার যান,
সেই ভাষাকেই ভালোবাসা আজ
করেছে আত্মদান।
যত চলি পথে তত দেখি দূরে
তোমার বিশাল ছায়া;-
সত্য কি শুধু পথের শপথ?
লক্ষ্য কি তবে মায়া?