স্বর্গ-মর্ত্য

এখন যদি ঘুমুতে পাই
চাই না বেঁচে থাকতে,
মরতে যদি পাই, তাহ’লে
ঘুমকে বলি, থাকগে।
মরে যেতেও চাই না, যদি
স্বর্গ জোটে ভাগ্য।

জেগে থাকলে বাঁচতে হবেই,
তাই-তো বলি আয় ঘুম,
কিন্তু যত বয়স বাড়ে,
ততই দূরে যায় ঘুম;
এবং যত রাত্রি বাড়ে
বিলাপ করি হায় ঘুম!

প্রিয়তমা পত্নী আমার
নিয়ে পুত্রকন্যা
আহা, কেমন নিদ্রারসের
মদিরতায় মগ্না;
কিছুতে আর কী এসে যায়,
যা হচ্ছে তা-ই হোক না।

জেগে-জেগে একলা রাতে
আমার সবই এসে যায়,
যা হয়েছে, হচ্ছে, হবে
পরস্পরে মিশে যায়;
বেঁচে থাকার ভীষণ ভারে
আমার বাঁচা পিষে যায়।

তাই ভাবি, চল্লিশের পরেও
মিথ্যে কেন ঘর গোছাই;
মরতে হ’লে মরি, কিন্তু
বাঁচতে হ’লে স্বর্গ চাই।
বাঁচতে গিয়ে হন না বুড়ো,
সেই দেবতার ভাগ্য চাই।

কেমন ক’রে হবে সেটা?
স্বর্গ সে-তো কল্পনা,
দেবতারাও ইচ্ছা শুধু,
সংখ্যাতে তাই অল্প না।
তাঁদের নিয়ে চিরটা কাল
কতই কাব্য গল্প না!

আসল কথা, বুড়ো হ’য়েও
বেঁচে যদি থাকতে হয়,
তাহ’লে-তো নিজের মনেই
স্বর্গ গ’ড়ে রাখতে হয়;
সময়হারা স্বপ্ন দিয়ে
দেবতাদের আঁকতে হয়।

সবাই জানে, বেঁচে-বেঁচেই
চোখ যাবে, দাঁত নড়বে;
অথচ ঠিক কেউ জানে না
কোন তারিখে মরবে।
স্বর্গে ছাড়া এমন বোঝা
কোনখানে আর ধরবে!

তাই মনে হয়, পৃথিবীতে
যা হচ্ছে তা হোক গে,
ঘুম না-এলে ল্যাম্পে জ্বেলে
বসি লেখার যজ্ঞে;
বাঁচতে হ’লে বাঁচি আমার
মন-বানানো স্বর্গে।

সঙ্গহারা অনিদ্রারে
আর কি এখন ভয় করি,
অমরতার তীব্র রসে
মর জীবন ক্ষয় করি;
বেঁচে-থাকায় বিকিয়ে দিয়ে
স্বর্গে বাঁচা জয় করি।