অলোকসামান্যতা

মনে হয় যেন এই পাহাড়বিহীন ঢালু দেশে
তবুও পাহাড় এক রয়ে গেছে সূর্যের কাছে
আমাদের চোখের আড়ালে থেকে- সম্পূর্ণ রেখায়
পাথরের গরিমায় বহু দিন স্থির হয়ে আছে।

যত দূর চোখ যায়- হৃদয়ের সাধারণ আশার মতন
ভোরের রুপালি নদী চ’লে গেছে উইঢিবিতরঙ্গের দিকে
সূর্যের সম্পূর্ণ রোদে প্রাণ পেয়ে সমস্ত প্রান্তর
মানুষের মতো যেন চোখ দিয়ে তুলে নদীটিকে

কোথাও মেঘের পারে নিয়ে যায়- সকালবেলায়
উটের লোমের মতো ফিকে আকাশের গায়ে ঠেস দিয়ে ভোর
সেখানে বৃহৎ, সাদা, নীল দুই জন চার জন মানুষের তরে;
মনে হয় যেন তারা পুরাতন পৃথিবীর উদ্বৃত্ত পাথর।

বহু দিন সকালবেলায় আমি প্রথম দোয়েল ডেকে গেলে
একটি নির্জন বই কোটের পকেটে রেখে দিয়ে
সূর্যকে লক্ষ ক’রে চ’লে গেছি ঢের দূর- আরও ঢের দূর
তবুও অধিক দূরে হেঁয়ালির মতন দাঁড়িয়ে

পাহাড়ের শিং এক রয়ে গেছে- এ-রকম নগ্ন, অবিকল অনুভব
হৃদয়কে আরও দ্রুত আবিষ্কারে ছুটে যেতে করেছে নিষেধ
শনাক্ত নদীর কাছে হোগলার খেত থেকে এক রশি দূরে
একটি প্রকাণ্ড সাদা ঢিলের উপরে ব’সে চেয়ে থেকে আড়ষ্ট আমোদ

অনুভব ক’রে গেছি- মনে হয় ঘোড়া’র দুধের মতো ধূসর এ-নদীর ভিতরে
কতটুকু জল আর অকৃত্রিম সূর্য কতগুলো
অথবা বাতাস দ্রুত, অনর্গল নেউলের পরমাত্মাদের মতো না-কী
মানুষের একাকী প্রতিভূ আমি- বিবেচনাধীন

এই সব নিসর্গের কাছে যেন- এ-রকম বোধ নিয়ে
চ’লে গেছি ধীরে-ধীরে শরীরকে তুলে নিয়ে ঘরে
চ’লে গেছি;- এক বার পিছনের দিকে চোখ নীরবে বুলালে
সর্বদাই পাহাড়কে দেখা যেত- সাধারণ মানুষের তরে

দাঁড়ায়ে রয়েছে একা- প্রান্তর, আকাশ, সূর্য, সংখ্যাহীন ঢিলের ভিতরে
সেইখানে পৃথিবীর সকল জিনিসগুলো নেই ব’লে শেষ করা যায় না ক’ কথা
ধুলো পায়ে- রোখানাপুরের এক সাধারণ মানুষ একাকী
সেই দিকে চ’লে যায় রোজ ভোরে- এমন অলোকসামান্যতা।