নিজেরে সে ব্যবহৃত ক’রে

নিজেরে সে ব্যবহৃত ক’রে
পৃথিবীতে বেঁচে গেছে বহুদিন
কোনও অরণ্যের মজ্জা যেন
লোহার মতন দৃঢ়
তবুও হৃদয়ে তার হাড়কুড়ো- মাখমের মতো
যে পুরুষ এরকম- তুমি তার নারী
পুরুষেরা এরকম ছাড়া আর কী হবে বলো ত’।

পিতামহ হয়ে গেল পৃথিবীতে বেঁচে থেকে
হয়ে গেল প্রপিতামহের মতো সাদা
জানুর উপরে শিশু নাচাল অনেকদিন
শঙ্খচিল দেখে গেল একশো বছর ধ’রে ভোরে
সমুজ্জ্বল লৌহ রৌদ্রে কঠিন তরঙ্গ নিয়ে উড়ে
হেমন্ত রাতের অগ্নি দেখে গেল
জলের গেলাসে- রাত্রে- স্তব্ধতায়- পৃথিবীর নদী;

তবু রক্ত দেখে কোনও দিন- পায় নাই ভয়
যুদ্ধ ছাড়া কোনওদিন মৃত্যুর রূপ
অনুভব করে নাই
অফুরন্ত তরবার হয়েছে গঠিত
যেন তার পিতৃবীজে
চেঙ্গিসের মতো সেও তরবার হাতে নিয়ে
দাঁড়াতে পারিত যদি মাতৃকোষ থেকে
ঈশ্বরী না যেত তারে ডেকে
কমনীয় পনির ধূসর হাত তার বুকে রেখে।

পিতৃপুরুষেরা তার গ’ড়ে গেছে
গাঢ় চূর্ণ প্রবল পরিখা
সেও তা রচিতে গিয়ে গম্বুজের এই পাশে
স্ফীত এক মৌচাক- এক পাণ্ডুলিপি
কুমায়ুন প্রত্যাগত কোনও এক প্রান্তরে মধুত্থের শিখা
রাতের ওপারে রাতে নির্জন বিস্ময়ে দেখে
গম্বুজকে রেখে দিল গরীয়ান স্তব্ধ ইস্পাতের
মতো ইতিহাসে ঢেকে।

মাঝে-মাঝে ঢের কথা বলিত সে
দুর্নিবার অরণ্যের হাওয়ার মতন
যখন বিক্লান্ত সূর্য পাহাড়ের স্তরে গেলে
পিছে ছুঁড়ে ফেলে যায় লোষ্ট্র সন্ধিক্ষণ
অদ্ভুত উল্কার মতো সেই শক্তি নামে
নদীর জলের পরে
মেধাবী স্থিরতা সব সলিলের
নেচে ওঠে বগলার রক্তিম কেশরে।

যেই সব বিশৃঙ্খলা- তবুও ওজস
বিরক্ত সূর্যের থেকে নেমে আসে
রাত্রির নীলায় কৃষ্ট নক্ষত্রেরা করে তারে বশ।

গৌরব হয় না প্রত্যাহত
ইতিহাস দেয় প্রীত করতালি
বেড়ে যায় আদি যোদ্ধা সন্তানের যশ
কুরুর মতন আর গার্গেয়ীর মতো।

মাঝে-মাঝে মনে হ’ত
দেখেছি অনেক হাত আজানুলম্বিত
মুখ তবু চিলের মতন নয়
সম্ভ্রান্ত ময়ূর ব’লে যেন মনে হয়

কিন্তু তার মুখ- অবয়ব- কৃষ্টি যেন সিংহী ভীত
প্রান্তরের রৌদ্রের মতন
যেন এই পৃথিবীর বাইজেনটিয় সম্রাটেরা- প্রতিধ্বনি পায়
ঘৃত খেয়ে অগ্নি তাই চিরদিন
নীলিমায় হতেছে বিলীন।