অবরোধ

বহু দিন আমার এ-হৃদয়কে অবরোধ ক’রে র’য়ে গেছে;
হেমন্তের স্তব্ধতায় পুনরায় ক’রে অধিকার।
কোথায় বিদেশে যেন
এক তিল অধিক প্রবীণ এক নীলিমার পারে
তাহাকে দেখি নি আমি ভালো ক’রে,- তবু মহিলার
মনন-নিবিড় প্রাণ কখন আমার চোখঠারে
চোখ রেখে ব’লে গিয়েছিল:
‘সময়ের গ্রন্থি সনাতন, তবু সময়ও তা বেঁধে দিতে পারে?’

বিবর্ণ জড়িত এক ঘর;
কী ক’রে প্রাসাদ তাকে বলি আমি?
অনেক ফাটল, নোনা, আরসোলা, কৃকলাস, দেয়ালের ‘পর
ফ্রেমের ভিতরে ছবি খেয়ে ফেলে অনুরাধাপুর- ইলোরার;
মাতিসের- সেজানের- পিকাসোর;
অথবা কিসের ছবি? কিসের ছবির হাড়গোড়?

কেবল আধেক ছায়া-
ছায়ায় আশ্চর্য সব বৃত্তের পরিধির র’য়ে গেছে।
কেউ দেখে- কেউ তাহা দেখে না ক’- আমি দেখি নাই।
তবু তার অবলঙ কালো টেবিলের পাশে আধাআধি চাঁদনীর রাতে
মনে পড়ে আমিও বসেছি এক দিন।
কোথাকার মহিলা সে? কবেকার?- ভারতী- নর্ডিক- গ্রীক- মশ্লিস- মার্কিন?
অথবা সময় তাকে সনাক্ত করে না আর;
সর্বদাই তাকে ঘিরে আধো-অন্ধকার;
চেয়ে থাকি,- তবুও সে পৃথিবীর ভাষা ছেড়ে পরিভাষাহীন।
মনে পড়ে সেখানে উঠোনে এক দেবদারু গাছ ছিল।
তারপর সূর্যালোকে ফিরে এসে মনে হয় এই সব দেবদারু নয়।
সেইখানে তম্বুরার শব্দ ছিল।
পৃথিবীতে দুন্দুভি বেজে ওঠে- বেজে ওঠে; সুর তান লয়
গান আছে পৃথিবীতে জানি, তবু গানের হৃদয় নেই।
এক দিন রাত্রি এসে সকলের ঘুমের ভিতরে
আমাকে একাকী জেনে ডেকে নিল- অন্য-এক ব্যবহারে মাইল-টাক দূরে পুরোপুরি।
সবই আছে- খুব কাছে; গোলকধাঁধার পথে ঘুরি
তবুও অনন্ত মাইল তার পর- কোথাও কিছুই নেই ব’লে।
অনেক আগের কথা এই সব- এই দূর প্রবাসের
সময়-বৃত্তের মতো গোল ভেবে চুরুটের আস্ফোটে জানুহীন, মলিন সমাজ
সেই দিকে অগ্রসর হয় রোজ- এক দিন সেই দেশ পাবে।
সেই নারী নেই আর, ভুলে তারা শতাব্দীর অন্ধকার ব্যসনে ফুরাবে।

চতুরঙ্গ। আশ্বিন ১৩৪৮