অন্ধকার রাতের স্বপ্ন

কখনও সে বড়ো অন্ধকার রাতে স্বপ্ন থেকে উঠে
নিজের বুকের ‘পরে হাত রেখে টের পেত- এখনও তবে সে
সমস্ত প্রত্যঙ্গ নিয়ে বেঁচে আছে বস্তুতই- সুস্থ শরীরে
যদিও শয্যায় সাদা মশারির অন্ধকারে শুয়ে
ঘুমের ভিতর থেকে মানবাত্মা ভেবে গিয়েছিল
ফলত সে ম’রে গেছে- কড়ির মতন দেহটাকে
মাটির উপরে রেখে ভবেশ- চারি-দিকে পরিজন শত্রুদের মুখে
রসোত্তীর্ণ হাসি হেসে- দম ছেড়ে- অবশেষে রাসভের ধোপা
অথবা ধোপার গাধা মানুষের মতো নিট কথা ব’লে হাসে।

তবু সে মরে নি কিছু- জানালার বাহিরে তাকায়ে
যত দূর দেখা যায় ক্ষিতিজ রেখাকে
ততটা দূরত্ব নিয়ে ভবেশের জমি
জেগে রাতে হাজারও ঘুমের ঘোরে তাহারই তো মৃত পিতৃপুরুষের কাছে
কলরবে কণ্ঠ দিয়ে যায় ব’লে তাহাদের ঘুম তার পর
গাঢ় এত- ভবেশ নীরবে তার শরীরকে আবার গুছায়ে
ঘুমের ভিতরে তবু ঢুকে যেতে দ্বিধা পেল- বিজন কপালে
ডান বাম হাত রেখে টের পেল মানুষের নিজের কপাল
(যত বেশি পিতৃপুরুষের দেওয়া তার চেয়ে বেশি)
আপনার পৌরুষের- বিশেষত গত কার্তিকের রাতে যখন গৃহিণী
ম’রে গেছে- মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে সব- উচ্চণ্ড ছেলেরা
যে যাহার বৃত্তি নিয়ে নানা রূপ নগরীর পথে
এখন সুসমীচীন বটে- তবু- নিজের উকিল
নিজের উইল তার- লয়েডসের মতো বড়ো ব্যাঙ্ক
কমিটি মিটিংগুলো- ববিনের মতো সব ধূসর কাগজ
নিজের জিনিস তার সর্বদাই- তাই সে বালিশে ঠেস দিয়ে
দুই পা ছড়ায়ে দিল- দক্ষিণ হাতের বাম দিকে
প্রথম আঙুলটাকে দেখে নিল- আঙুলের নখে
দর্পণের মাঝখানে- পৃথিবীর প্রবীণ সময়
পুনরায় ধরা পড়ে: যা হয়েছে- যা হতেছে- অথবা যা হবে।
সময়ের রাত্রির সেই দিকে ভিড়ে গিয়ে (সম্মানীয়) গৃহিণীর আগে
নিজে সে বিধবা হয়ে গেছে বটে- তবু তার শোক
তাহারই হৃদয়ে মনে সঙ্কুলান আছে জানে আপন বাসাতে
সিঁদ কেটে যায় নাই ব’লে সব- সকলের হাসির ভিতরে
হাসি আজ- শশব্যস্ত সর্বদাই- সম্ভ্রান্ত- সফল

এত সজীবতা দেখে সর্বদাই পয়ঃপ্রণালীর থেকে উঠে
জীবাণু ও রমণীরা কাছে এসে দেখা দেয়- স’রে যায়- নেপথ্যের থেকে
ইন্দ্র- অগ্নি- যম- নহুস- নচিকেতা- বাতাস- দেবতা
বরুণ না দেখে যদি তবে কোনও চোখ নেই কারু
ভাজার মন আছে ব’লে কোথাও কাহারও কোনও রোগ- মৃত্যু নেই
ফলত সকালবেলা ভবেশের চায়ের টেবিলে
সকল খবর আসে- মোহহীন রেডিও’র থেকে
ঢের বেশি সমীচীন- তাই তার দেয়ালের প্রবীণ ফোকরে
মিছে টাকা ব্যয় ক’রে পৃথিবীর স্টেশনগুলোর
বিলুপ্ত বড়ের চাল চালে নি সে- ঢের দিন পৃথিবীতে টিকে
বহু পিতৃপুরুষের থেকে জন্মে প্রবীণ মানুষ
ক্রমেই বয়স্ক হয়- যত বেশি সমারোহে পৃথিবীর যুবকেরা আজ
হয়ে যায় অবশেষে ক্রীতদাস- দার্শনিক- ভাঁড়- ভাড়া ফেউ
অন্ধকারে অবিরাম শবে তাই জাঁতাকল জাগ্রত দেবতা।