অপরূপ রাত্রির সঙ্গমে

দেরিতে গড়ায়ে চাঁদ নিভে গেলে- অন্ধকারে- স্বপ্নের ভিতর
নিকটে পেলাম এক ধবল মার্জারী যেন- বিড়ালাক্ষ-আলো
তাপ দিয়ে নিভে গেল বিছানায়- দু’-এক মিনিট
তার পর বন্ধুর মতন এক মুখের প্রতিভা এসে নিকটে দাঁড়ালো

প্রথম দেখেছি তাকে কোথায়-যে- অরণ্যের জরায়ু-ফোকরে
সোনালি বাঘের কাছে- মেহগেনি-বীথির ছায়ায়
লেজারে যেটুকু সূর্য পড়ে এসে পৃথিবীতে- তেমন আলোয়
হৃদয়ে গিয়েছে জেগে আর-এক রকম রুচি, আত্মপ্রত্যয়
এই মুখ কোনও দিন হিংসা দ্বেষ রক্তস্রোতে জুয়ার আসরে
অথবা লালসা প্রেম মশকরা চায়ের টেবিলে
অথবা আত্মস্থ সব টুরিস্টের স্বপ্নের দ্বীপে
অবিরল বুনোঝাউ কাঁচপোকা এক্যুয়ামেরিন কুয়াশায়
কোনও দিন থাকে নি তো- আমি দেখি নাই তাকে
অথবা হৃদয় সব ভুলেছিল স্বাভাবিক মানবিকতায়
কোটি বৎসরের পরে নক্ষত্রের রশ্মি যে-রকম
গোল হয়ে ঘুরে আসে নিজের আশ্রয়ে
কোথাও পায় নি কিছু নিজের আলোর গতি ছাড়া
আমার স্মৃতিও সেই অন্ধ পরিধির মতো ঘুরে
অনেক যোজন পথ নীল সন্দিহান চোখে দেখে নিল আর-এক বার
ভ’রে আছে অবিকল আত্মপ্রত্যয়ের সাদা কালির আঁচড়ে

আমি আছি- সেখানে দ্বিতীয় কোনও লোক নাই
আমার টেবিল ঘিরে বড়ো-বড়ো মনীষীর বই
আমারই মনন সব। কল্পনার বিশৃঙ্খলা। শ্লেষ। নিষ্ফলতা।
আমারই সমাজ, বন্ধু, মৃত্যু; আমি জরৎকারু, নৃসিংহের মতন দাঁড়াই
দ্বিতীয় কে রয়ে গেছে এই ছায়া-টেবলোয়, আহা,
হয়তো-বা দুই জন: অফিসের বস্ আর আমার সারসী
তবু তারা দ্বিদল বীজের মতো ফেঁড়ে গিয়ে অঙ্কুরের মতো
আমাকেই বার করে চির-দিন- পীড়িত প্লীহায় আমি হাসি
আমার এ সর্বদাই সম্মুখীন অবলঙ্ প্রবীণ মুকুরে
আমিই সমাজ গড়ি- ভেঙে ফেলি- সক্রিয় চাকার মতো চ’লে
দ্রুততম গতি, তবু পিরামিডদের মতো স্থির- কালো
সমাজ নতুন হতো হয়তো-বা গতি আরও দ্রুততর হলে
মুকুরে করুণ ব্যঙ্গ ক’রে এক-আধ বার
ব’লে যায় এই কথা হৃদয়ের ‘পরে হাত রেখে
মুকুরের গর্ভে তবু দূরতর পরিপ্রেক্ষিতে
অন্য কেউ আছে না-কি- আমি সেই বধিরকে ডেকে
সহসা বিস্মিত ক’রে দিতে চাই উদাস স্বর্গকে
পৃথিবীকে- নরককে- আর যারা মর্ত্যনরকের
মাঝখানে পিতৃপরিচয় খোঁজে জারজের মতো সব- তাহাদের-
কেউ নেই- অথবা আহ্বান কোনও দূরতর দূরত্ব মাপের
মানদণ্ড নয় এই অবিরাম গোলাকার পথে
সমস্ত সূর্যের দিন ঘিরে তবু আমি
এই স্বচ্ছ পৃথিবীর স্বাভাবিক সহজ সন্তান
রৌদ্রের দ্বারে ঢুকে- পিঠোপিঠি দ্বার দিয়ে আমি
নিশীথের পৃথিবীতে- জননীর জরায়ুর থেকে হর্ষে নেমে
হাতল ঘুরাব গিয়ে এক দিন নরকের দ্বারে
জানি আমি; এই সব কথা আর পিরামিডদের কথা মনে রেখে
কখনও বেলুনে চড়ি। বালিকার হাত থেকে উড়ে যেতে পারে
পাতিহাঁস যত দূর- উড়ে যাই- পাথরের মতো ভারি দেহাধার নিয়ে
নিঃশেষিত তুষের মতন ম্লান ডানার সম্ভ্রমে
শেয়াল তবুও তার প্রিয়তম- হে সোনালি বাঘ,
হে অদৃশ্য মুখ, বিভা,- অপরূপ রাত্রির সঙ্গমে।