প্রভাত শুরু হয়ে গেছে

হয়তো প্রভাত শুরু হয়ে গেছে- সভ্যতার
তবুও রাত্রি ছিল প্রভাতের আগে-
অন্ধকারে আমাদের সরলতা বেশি ছিল
কনফুশিয়াস এসে উপদেশ দিয়েছিল
দৃষ্টিপথে সচ্ছল জলের মতো হেসে
জলের নিক্কণ তুলে চ’লে গেছে;
সিকন্দর’ও রাজ্য জয় ক’রে গেছে।

সে-সব সরল রাত মুছে গেছে আজ
আশ্চর্য গভীর রৌদ্রে- প্রভাতের;-
যেন ঢের অশ্বারোহী দিগন্তরে চ’লে যায়
যেন ঢের হরিয়াল দক্ষিণ সমুদ্র থেকে উঠে
উড়ে যায়- অনর্গল উড়ে যায়।

হাড়ের মতন সাদা প্রভাতের রোদ।
রাতে যে-কবরগুলো দেখে গেছি
ধ’রে গেছি যেই মেহগেনি-ছায়া, যে-শিশির
মসৃণ কপালে হাত রেখে গেছি যেই মনীষীর
নগ্ন আগুনে আজ খুলে গেছে তারা সব
তাহাদের জিভ, চোখ, হাতের অক্ষর
আনকোরা করোটির মতো অভিনব।

দক্ষিণ সমুদ্র থেকে পাখিদের ভিড়
সকল সারস যদি উড়ে যায় উত্তর মেরুতে
উত্তর মেরুর থেকে পৃথিবীর বাহিরে- কোথাও
তা হলে তখন তারা সৈকতের বালির স্ফটিকে
নিস্তব্ধতা রেখে যাবে
নিজেদের পালকের ‘পরে যাবে লিখে:
রকেটের উদ্গীরণ বৃহস্পতি-নক্ষত্রের তরে
লাটিমের মতো আদি লাটিমের গতির ভিতরে
চির-দিন;- কারণ গতিই সত্য-
গোলকধাঁধার মতো গতি- অকৃত্রিম।

সূর্যে রৌদ্রে এই সব পাখিগুলো কোনও এক দূরতর চরম স্ফটিক
চায় না কি?- প্রিমাম মোবিলে ঘুরে কোনও এক মহীয়ান গ্রীক
বুঝেছিল ইহাদের পিপাসার মানে;
আকাশ ধাঁধার মতো গোলাকার তবে
আমাদের রক্তও- আমাদের মনীষীরা- সম্রাট ও সঙ্।
কোনও চীন- হয়তো-বা ভারতীয় প্রেমিকের ভুল অবলঙ্
অনেক সরল, শুদ্ধ রেখার আকারে
অবিকল সাদা চোখে- সোজা পথে হেঁটে
অবিকল অগ্রসর হয়ে
অবিকল দ্বার খুলে- অন্য দ্বারে নিঃসরিত হয়ে
অবিকল অন্ধকার থেকে নেমে আলোর ভিতরে গিয়ে
আলোর ভিতর থেকে অন্ধকারে পুনরায় উঠে
জয় পাবে;- নির্জন প্রশান্তি নয়-
কিন্তু এক অকৃত্রিম গোল অনুভব।

তবে আমাদের পায়ে কোনও শিকলের শীতলতা নাই
সর্বদাই চোখের সুমুখে পথ র’য়ে গেছে- দ্বার আছে
দ্বারের ভিতর থেকে নির্গমন র’য়ে গেছে অন্য এক দ্বারে
এখন প্রভাত কাল;
সূর্যের গভীর রৌদ্র জ্ব’লে যায় মানুষের নিখচিত হাড়ে
আমাদের ভালো লাগে- রাশভারি মোম মাংস মর্যাদার বুনুনির পরে
লঘু কৃকলাস নাচে মরুবালি সিলিকন কাঁচের ভিতরে।
(ঘুরে যায় গোলাকার বৃত্তের আকারে)

কেননা, যা কিছু ওড়ে- হেঁটে চলে-
হামাগুড়ি দিয়ে ফেরে মাটির উপরে
সকলেই পূর্ণ মাত্রা পেয়ে গেছে- পরিধির;
মাত্রা- অতিরিক্ত এক চুল গণিতের ভ্রম ব’লে ঘুরুনো লাটিম এত স্থির
এই সব প্রত্যবায় নয়
আমাদের কল্পনায় প্রত্যবায় ব’লে মনে হয়।