ভিখিরিনি

অন্ধকার গলি বেয়ে প্রকাণ্ড পেটের ভিখিরিনি
মকরক্রান্তির চাঁদ জুড়ি দেখে হাসে
পাখির পালকে রোমে ছেঁড়া কাঁথা বেঁধে
কয়েকটা মৃত পচা পাখি রেখে কাঠের গেলাসে

আমার এ-জানালার পাশ দিয়ে চ’লে যায় রোজ
ঘড়ি-ধরা রাত দশটায়
মনে হয় যেন তার দিন ছিল- এক দিন-
প্রতিটি গভীর কাজ ভালো ক’রে ঠুকে দিত হাতুড়ির ঘায়

আমি পাখি ভালোবাসি- সব-চেয়ে
তার পর ভিখিরিনি, ভিখিরিকে: যদি তারা পাখির মতন।
আর সব- সময়ের- সময়ের ভ্রষ্ট শিশু-
করে শুধু প্রৌঢ়ের নিদ্রা আকর্ষণ

এই ব্যূঢ় ভিখিরিনি-মানুষকে দেখেছি শৈশবে আমি
যৌবনেও- যখন যৌবন এসে ক্রান্তিতে দাঁড়াল
হয়তো সে ম’রে গেছে, তবু তার সম্পূর্ণ প্রতীক ম’রে গেলে
নিভে যেত আমাদের দাঁত থেকে সমুজ্জ্বল এনামেল-আলো

যখন আগুন জ্বলে বহু ক্ষণ- ধীরে-ধীরে- নিজ-মনে
তখন নিজের সত্তা ভুলে গিয়ে ঘুমায়ে থাকিতে পারে তুষ
গর্ভিণীর এই অহঙ্কার দেখে বাতাস আমোদ পায়
গভীর তামাশা বোধ করে নিজে পুরাণপুরুষ

তখন মাহেন্দ্রক্ষণ। সহসা কঠিন স্পর্ধা জেগে ওঠে মরা গলা পচা পাখিদের
আর যে-মানুষ সেই লোল মাংস খায়
নগরের সমুজ্জ্বল ঘড়িগুলো
বেজে ওঠে ভয়ঙ্কর হাতুড়ির ঘায়

ভিখিরিনি নারীটির দু’টি চোখ: পাথরের মতো
আমার দেরাজ থেকে অবলুপ্ত কষ্টিপাথরের মতো মনে হয়
তবুও সে সমীচীন হৃদয়ের যোজনাবশত
পাথর দু’টোকে দুই সন্তান মনে ক’রে চুরি ক’রে নিয়েছে নিশ্চয়

আমার দেরাজে যেই সোনা ছিল সেই সব নিবিড়তা অবহেলা ক’রে
সংযত রসনায় বাতাসের পাখিদের সাথে কেউ পারিবে কি এঁটে
কিংবা ভিখিরিনিদের সাথে প্রজ্ঞায়?- তাহার ধারণা
পাথর জন্মায় সব অন্তঃসত্ত্বা মধ্যবিত্ত পুরুষের পেটে।