কবির সমাধি


যাও, যাও, যাও,- আর আসিওনা,
প্রেমের মধুর কথা- আর বলিও না!
বিচ্ছেদ-অনলে প’ড়ে,
সুখ শান্তি যাবে দূরে,
কেন বৃথা জীবন হারাবে?
দু’দিনের তরে, বেঁধে প্রেম-ভোরে
কোন্‌ সুখ পাবে?


আর আসিও না- আর তুষিও না,
প্রেমের মধুর কথা- আর বলিও না!
হৃদয় আমার অশান্তি আগার,
ধূ ধূ চিতা জ্বলে!
এ চিতার শিখা নিবিবে না কভু,
-নিবে না নয়ন-জলে!
তিল তিল করি যে চিতার বহ্নি
হৃদয়ে জ্বেলেছ তুমি,
সে চিতা কি কভু নিবিবে জীবনে?
হৃদি যে শ্মশান ভুমি!


যাও, যাও, যাও- আর আসিও না,
অতীতের স্মৃতি- আর জাগা’য়ো না,
যাও, যাও, যাও তুমি!
কেন এ’সে পুনঃ কাদাও আমারে,
ভাসাও দুঃখের অকূল পাথারে?
ক্ষমা কর প্রিয়ে!
আজি যাও তুমি!


আসিও তখন, অভাগা যখন
মুদিবে নয়ন দুটি,
আকুল বাসনা যবে মুরছিয়া
চরণে পড়িবে লুটি
আসিও তখন ছুটি!


প্রেমের সঙ্গীত গাইয়া গাইয়া,
উন্মাদিনী প্রায় আসিও ছুটিয়া,
পশ্চাতে চিকুর পড়িবে দুলিয়া,
মুগ্ধ হয়ে রবে স্তব্ধ বন-ভূমি!
শ্যাম দুর্ব্বা ‘পরে শিশিরের ধার,
সে বড় পবিত্ৰঅশ্রু অভাগার,
নিতি নিতি ফুটে আশায় তোমার,
লভিবে নিৰ্বাণ পদ-রেণু চুমি!
আসিও তখন তুমি!


আসিও তখন অভাগা যখন
নির্জ্জন সমাধি-ভূমে!-
জনমের মত, জ্বলিয়া পুড়িয়া
থাকিবে গভীর ঘুমে!
সে সমাধি পরে শেফালী বকুল
ঝরিবেক ঝুর ঝুর,
তারি সনে তুমি, ভাসি আঁখি-নীরে
মিশা’য়ো প্রেমের সুর!


সেই আঁখি-নীরে, সেই প্রেম সুরে
নূতন জীবন লভি’-
হয়ত কখন, জাগিতেও পরে
তোমার এ প্রিয় কবি!
নাহি জাগে যদি, কুসুম বিছা’য়ে
ব’স সে সমাধি পরে!
শেফালী বকুল ঝুর ঝুর ঝুর
ঝরিবে তোমার শিরে!


আমারি প্রাণের স্নেহ-আলিঙ্গন
পাবে তুমি সে ফুল পরশে!
আমারি প্রাণের আকুল নিশ্বাস
পাবে তুমি সে ফুলের বাসে!
সেই ফুল সনে ফুল-রাণী হয়ে
ঘুমায়ে পড়িও সেই ভূমে!
তখনি মোদের হইবে মিলন
দুজনে রহিব গভীর ঘুমে!


সমীর বহিবে ঝুর ঝুর ঝুর
ফুলের সুবাস করিয়া হরণ!
পুর্ণিমার চাঁদ বিতরিবে সুধা
দেবতা করিবে কুসুম বর্ষণ!
আকুল পাপিয়া রহিয়া রহিয়া
গাইবে মোদের প্রেমের গাথা!
বিটপী-পল্লব ব্যজনিয়া ধীরে
জানাবে তাদের মরম-ব্যথা!

১০
চাঁদের কিরণে ফুলের সৌরভে
চারিদিক সব হবে ভর পুর!
তারি মাঝে মোর করিব শয়ন
লভিব হৃদয়ে আনন্দ প্রচুর!
দয়েলা কোয়েলা বাজাইয়া বীণা
গাইবে মোদের প্রেমের মিলন!
শ্যামা ও বুল্‌ বুল্‌, ফুলে ফুলে বসি
করিবে মোদের স্নেহ-সম্ভাষণ!