গীতিনাট্য
‘শাল-পিয়ালের বনে’
ঝুমরো: শাল-পিয়ালের বনে গো পাহাড়তলির কাছে
একটি ছেলে শিস দেয় আর একটি ছেলে নাচে।
নূপুর: সেই ছেলেটির বুনো স্বভাব ভারি
বাঁশীর সাথে বর্শা-ধনুক-ধারী
সেই মেয়েটি দোলনা বেঁধে দোলে মহুল গাছে।।
মেয়েটির গান
ঝুমরো: তীর ধনুক নিয়ে বল না কোথায় যাস?
পাখী যদি মারিস ঝুমরো আমার মাথা খাস।
ঐ শোন ‘চোখ গেল’ পাখী-
জামের ডালে উঠল ডাকি’
শুনিস নাকি মহুল-বনে উঠছে দীঘল শ্বাস।
ছেলের গান
শোন রে নূপুর, পাহাড়তলীর মেয়ে।
খুশী হলুম দেখতে তোরে পেয়ে।।
বন-বরাহ শিকারে
যাব পঞ্চকোট পাহাড়ে
(মোর) তীর থেমে যায় বুনো পাখীর
আঁখির পানে চেয়ে।।
মেয়েটির গান
হলুদ-বরণ ঝিঙে ফুলের কাছে
দেখ না কেমন দুটি ফিঙে নাচে।
দেখনা চেয়ে ভাই
মোর শ্যামলী গাই
মায়ের মতন কেমন চেয়ে আছে।।
আজ মানা বনে যেতে,
আমি বসব-আঁচল-পেতে
তুই বাঁশী বাজা বসে অশথ-গাছে।।
ছেলের গান
কুনুর-নদীর ধারে- শোন ডাকছে বালি-হাঁস।
মানিক-জোড়ের ঝুমকো পরে হাসছে নীল আকাশ।।
ওদের সাথে হায়
মন বাইরে যেতে চায়
বাঁশী হাতে নিলে, পরান আরো হয় উদাস।।
(মাদল ও বাঁশীর সাথে ফেড-ইন)
কোরাস গান
পুং: কয়লা খাদে যাব না।
করব ধানের পাট।
পাতার পাটি বিছিয়ে শুই
চাইনে পালং-খাট।।
পুং: খড়ের পালই ধনের মরাই নিয়ে
রাত কাটাব মহুয়ার মউ পিয়ে।
ছেলে এবং মেয়ে
আমরা কেমন সুখী
জংলা মায়ের জংলী-খোকা-খুকী।।
যেন বনের মৌটুসী
থাকি সদাই খুশী।
স্ত্রী-১- বট-অশথের তরুর মতন আমায় ছায়া দিস
স্ত্রী-২- আমার মনের মাঠে হাসিস হয়ে ধানের শীষ।
ছেলের গান
আমি যাবই যাব বনে
বুনো বাঘের অন্বেষণে।।
ফিরি যদি, রাতের বেলা
বাঁশী নিয়ে করব খেলা
কয়লা আমি কাটব নাকো খাদে
মাঠে যেতে পরান আমার কাঁদে
তার চেয়ে ব্যাধ হওয়া ভালো নূতন যৌবনে।।
মেয়ের গান
শোন ঝুমরো, শোন
তোর কাঁদবে যে মা-বোন।
ভাইবোনের চেয়ে বন কি রে তোর
এতই আপনজন।।
কুহু উহু উহু বলে দেখ উড়ে গেল চলে
কুসুম নদীর দুই কুল দেখ উঠল ভরে জলে,
তোর কনে বৌ কাঁদবে যে ভাই নিয়ে ঘরের কোণ।।
ছেলের গান
গিরিমাটির দেশে গো
নাই যদি আর ফিরি
আমার কথা বলবে কেঁদে ঝরনা ঝিরিঝিরি।।
কয়লাখাদে উঠবে ধোঁওয়া, চাঁদ ঢাকবে মেঘে,
(সেই) চাঁদের বুকে আমার কালো ছায়া উঠবে জেগে
আমার নুপুর বাজাবে গো শিরীষ পাতা
জিরিজিরি।।
আমার কনে বৌ-এর বুকে বাজবে বাঁশী একা
রামধনুতে হারানো মোর ধনুক যাবে দেখা।
তাল-পুকুরে শালুক হয়ে
যার আশপথ রইব চেয়ে-
দেখলে তারে অমনি করে যাব ধিরিধিরি।।
(১৫৯)