কথোপকথন ১২

নন্দিনী-
জয় গোস্বামী কত বড় বড় লিখেছে,
এত ভাঁটা কেন সহসা তোমার কাব্যে?
জয়দেব বসু, তার নৌকাও লম্বা,
কবিতার মরা গাঙে কি জোয়ার ডাকবে?

শুধু প্রবন্ধ, শুধুই প্রজ্ঞা, বুঝেছি
মাথাটি চিবিয়ে খেয়েছে শঙ্খ ঘোষেরা।
এলিয়ট হবে? পাউন্ড? আপলিনের?
রক্তে ঢুকেছে বোদলেয়ারের দোষেরা।

অরুণ মিত্র? তিনি তো চিরবসন্তে
রাহুল বা রূপা তারাও বর্ষা-বাদলে।

কবিতামেলায় কত কবি, ভিড়-ভাট্টা
সেখানেও তুমি অনুপস্থিত। না-দলে।

কোন ম্যাগাজিন উল্টোলে যদি না দেখি
তোমার কবিতা, বুকে খোঁচা মারে কী ক্ষত।
আমার অহঙ্কার কী তাহলে ফুরল?
বিয়াত্রিচের প্রেরণার দিন বিগত?

শুভঙ্কর-
কবিতা, বা না-কবিতা, এটা প্রশ্ন নয়।
প্রশ্ন, কাকে বিদ্ধ করে সময়ের কতখানি ক্ষয়।
আমার কবিতা তুমি, তোমাকে তো ফোটাতে ভুলিনি
তোমার পূজার দ্বারা -ধূপে-দীপে প্রত্যহ খুলি নি?

কিন্তু আমাদের বৃত্ত ঘিরে আছে যে সমস্ত ভুল,
যদি না উপড়ে ফেলি তার সব শাখা অন্তমূল
আজকের এই সব রমণীয় মুহূর্তের পরে
আসবে এমন ক্ষতি, আকস্মিক উৎপীড়ক ঝড়ে
উড়ে যাবে রাখী-বাঁধা প্রেমের সংজ্ঞাও।
তুমি কি তেমন কোন ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ চাও?

যে মানুষ প্রশ্নে দীর্ণ নয়
প্রশ্নে হত্যা হয় নি বে ঘুমে,
বরমাল্য তাকেই পরিও।
আমি থাকি নিজ বধ্য ভূমে

কী রাগ, কী রাগ মশায়ের?
আমি যেন বলেছি তোমাকে
সমস্ত ভুবন ভুলে গিয়ে
শুধু এই আমাকেই নিয়ে
চঙ্ক্রমণ হোক কুম্ভীপাকে।

আমি চাই শতচূড়া ঢেউয়ে
ব্যাপ্ত হোক তোমার নির্মাণ
প্রশ্নে প্রশ্নে দীর্ণ কাণ্ড মূল
শাখায় ফোটাক গুচ্ছফুল
নিয়তই তুমি জায়মান।

তোমার গর্বিত বিস্ফোরণে
কবিতা জ্বলুক লক্ষশিখা।
তৃষ্ণার্তকে খর দ্বিপ্রহরে
প্রথা-ভাঙা জলদান করে
তৃপ্ত হই, আমি চণ্ডালিকা।