কথোপকথন ১

তোমার পৌঁছতে এত দেরি হল?
পথে ভিড় ছিল?
আমারও পৌঁছতে একটু দেরি হল
সব পথই ফাটা।
পথে এত ভিড় ছিল কেন?
শবযাত্রা? কার মৃত্যু হল?
আমাদের চেনা কেউ না তো?
এই তো সেদিন যোগো গেল
দৌড়ে গেল, এখেনা ফিরল না।
আগে পরে শঙ্কর, বিমল।

আমাদের যাকে যাকে প্রয়োজন তারাই পালায়
দূরের সমুদ্রে চলে যায়
কালো নুলিয়ারা যায় যে-রকম বিলীনের দিকে।
আরও যাবে, আমরাও যাব।
লোকাল ট্রেনের মতো বেশ ঘন ঘন
আসছে যাচ্ছে মৃত্যু আজকাল।
তোমার কেমন মৃত্যু ভাল লাগে?
আমি? সেরিব্রাল?
মৃত্যুর কথায় রাগ হল?
মৃত্যুর প্রসঙ্গ তবে থাক
জীবনের আলোচনা হোক।

তোমার চিবুকে এত ছায়া কেন?
অন্ধকারে ছিলে?
আমার কপালে এত ঘাম কেন?
রোদ্দুরে ছিলাম।
তুমি আজ টিপ পরনি তো?
আমি আজ পাঞ্জাবি পরিনি।
মোার খোঁপার ঢুল ভাঙা কেন?
ঝড়ে পড়েছিলে?
তোমার চুলে ফাঁকে রক্ত কেন?
বাজ পড়েছিল।
আজকাল রোজই ঝড় ওঠে।
গাছ পড়ে, ল্যাম্পপোস্ট পড়ে
মানুষও পাখির মতো ছিঁড়ে-খুঁড়ে
খানাখন্দে পড়ে।
ঝড় যেন তুফান এক্সপ্রেস
হাঁউ-মাঁউ হাঁউ-মাঁউ
মানুষের গন্ধ পাঁউ…
ঝড়ের কথায় রাগ হল?
ঝড়ের প্রসঙ্গ তবে থাক।
জীবনের আলোচনা হোক।

তোমার চোখের মণি লাল কেন?
বৃষ্টিতে ভিজেছ?
আমার হাতের শিরা নীল কেন?
আগুনে পুড়েছে।
বলেছিলে আজ চিঠি দেবে,
এনেছ? বাঃ মেনি মেনি থ্যাঙ্কস।
একি দিলে? এ তো শুধু খাম!
খাম থেকে চিঠি কোথা গেল?
ঝড়ে উড়ে গেছে?
আমারও চিঠির সব লেখা
জলে ধুয়ে গেছে।
আজকাল জলও শিখে গেছে
নানান ছলনা।
জল কারো শাড়িকে ভেজায়
জল কারো ঘরবাড়ি কাড়ে
দরজায় ব্যস্ত কড়া নাড়ে।
একবার আমাদের ঘরছাড়া করেছিল জল
বালিশ, তোশক, খাট, ঘটি-বাটি থালা
সবকছিু হাঙরের হাঁ-এ গিলে খেল।
পচা জলে আমরা যেন শ্যাওলার,
কচুরিপানার
নিকট আত্মীয় হয়ে…
জলের কথায় রাগ হল?
জলের প্রসঙ্গ তবে থাক।
জীবনের আলোচনা হোক।

কাল তুমি স্বপ্ন দেখেছিলে?
মিশর? মিশরে গিয়েছিলে?
কী আশ্চর্য! আমিও তো কাল
স্বপ্নে ঐ মিশরে ছিলাম।
সারি সারি মমির কঙ্কাল।
হীরের চোখের মতো চোখ
মুক্তার দাঁতের মতো দাঁত
প্রাণ ছাড়া বকি সব প্রাণের আরাম।
নক্ষত্রদীপ্তিতে ফুটে আছে।
এদের কি মৃত্যু হবে?
তুমি প্রশ্ন জানালে আমাকে।
এরা তো মৃত্যুরই স্কাল্পচার
আমি জানালাম।
তোমার দুচোখে নদী হল
তোমার চিবুকে জোৎস্না এল।
তুমি যেন নীল অন্তরীক্ষ হলে।
তুমি বললে, আমি মমি হব।
তুমি মৃত হতে হতে
তুমি ধ্বংস হতে হতে
তুমি মমি হতে হতে
মমির কথায় রাগ হল?
মমির প্রসঙ্গ তবে থাক।
জীবনের আলোচনা হোক।