দেবতা

দেবতা মানবলোকে ধরা দিতে চায়
মানবের অনিত্য লীলায়।
মাঝে মাঝে দেখি তাই-
আমি যেন নাই,
ঝংকৃত বীণার তন্তুসম দেহখানা
হয় যেন অদৃশ্য অজানা;
আকাশের অতিদূর সূক্ষ্ম নীলিমায়
সংগীতে হারায়ে যায়;
নিবিড় আনন্দরূপে
পল্লবের স্তূপে
আমলকীবীথিকার গাছে গাছে
ব্যাপ্ত হয় শরতের আলোকের নাচে।

প্রেয়সীর প্রেমে
প্রত্যহের ধূলি-আবরণ যায় নেমে
দৃষ্টি হতে, শ্রুতি হতে;
স্বর্গসুধাস্রোতে
ধৌত হয় নিখিলগগন-
যাহা দেখি যাহা শুনি তাহা যে একান্ত অতুলন
মর্তের অমৃতরসে দেবতার রুচি
পাই যেন আপনাতে, সীমা হতে সীমা যায় ঘুচি।

দেবসেনাপতি
নিয়ে আসে আপনার দিব্যজ্যোতি
যখন মরণপণে হানি অমঙ্গল।
ত্যাগের বিপুল বল
কোথা হতে বক্ষে আসে;
অনায়াসে
দাঁড়াই উপেক্ষা করি প্রচণ্ড অন্যায়ে
অকুণ্ঠিত সর্বস্বের ব্যয়ে।
তখন মৃত্যুর বক্ষ হতে
দেবতা বাহিরি আসে অমৃত-আলোতে;
তখন তাহার পরিচয়
মর্তলোকে অমর্তেরে করি তোলে অক্ষুণ্ণ অক্ষয়।

শান্তিনিকেতন
২৬ শ্রাবণ, ১৩৪২