মহুয়া

বিরক্ত আমার মন কিংশুকের এত গর্ব্ব দেখি’।
নাহি ঘুচিবে কি
অশোকের অতি-খ্যাতি, বকুলের মুখর সম্মান?
ক্লান্ত কি হবে না কবি গান
মালতীর মল্লিকার
অভ্যর্থনা রচি’ বারম্বার?
রে মহুয়া, নামখানি গ্রাম্য তোর, লঘুধ্বনি তা’র,
উচ্চশিরে তবু রাজকুল-বণিতার
গৌরব রাখিস্ ঊর্দ্ধে ধ’রে।
আমি তো দেখেছি তোরে
বনস্পতি গোষ্ঠীমাঝে অরণ্যসভায়
অকুণ্ঠিত মৰ্য্যাদায়
আছিস্ দাঁড়ায়ে;
শাখা যত আকাশে বাড়ায়ে
শাল তাল সপ্তপর্ণ অশ্বত্থের সাথে
প্রথম প্রভাতে
সূৰ্য্য অভিনন্দনের তুলেছিস্ গম্ভীর বন্দন
অপ্রসন্ন আকাশের ভ্রূভঙ্গে যখন
অরণ্য উদ্বিগ্ন করি’ তোলে,
সেই কালবৈশাখীর ক্রুদ্ধ কলরোলে
শাখাব্যূহে ঘিরে
অশ্বাস করিস্ দান শঙ্কিত বিহঙ্গ অতিথিরে।

অনাবৃষ্টি-ক্লিষ্ট দিনে,
বিশীর্ণ বিপিনে,
বন্যবুভুক্ষুর দল রিক্ত পথে,
দুর্ভিক্ষের ভিক্ষাঞ্জলি ভরে তা’রা তোর সদাব্রতে।।
বহুদীর্ঘ সাধনায় সুদৃঢ় উন্নত
তপস্বীর মতো
বিলাসের চাঞ্চল্যবিহীন,
সুগম্ভীর সেই তোরে দেখিয়াছি অন্যদিন
অন্তরে অধীরা
ফাল্গুনের ফুলদোলে কোথা হ’তে জাগাস্ মদিরা
পুষ্পপুটে;
বনে বনে মৌমাছিরা চঞ্চলিয়া উঠে।
তোর সুরাপাত্র হ’তে বন্যনারী
সম্বল সংগ্রহ করে পূণিমার নৃত্য-মত্ততারি।
রে অটল, রে কঠিন,
কেমনে গোপনে রাত্রিদিন
তরল যৌবনবহ্ণি মজ্জায় রাখিয়াছিলি ভ’রে!
কানে কানে কহি তোরে
বধূরে যেদিন পাবো, ডাকিব মহুয়া নাম ধ’রে।

১৮ ভাদ্র, ১৩৩৫