অনাবশ্যক

কাশের বনে শূন্য নদীর তীরে
আমি তারে জিজ্ঞাসিলাম ডেকে,
‘একলা পথে কে তুমি যাও ধীরে
আঁচল-আড়ে প্রদীপখানি ঢেকে?
আমার ঘরে হয় নি আলো জ্বালা,
দেউটি তব হেথায় রাখো বালা।’
গোধূলিতে দুটি নয়ন কালো
ক্ষণেক-তরে আমার মুখে তুলে
সে কহিল,’ভাসিয়ে দেব আলো,
দিনের শেষে তাই এসেছি কূলে।’
চেয়ে দেখি দাঁড়িয়ে কাশের বনে,
প্রদীপ ভেসে গেল অকারণে।

ভরা সাঁঝে আঁধার হয়ে এলে
আমি ডেকে জিজ্ঞাসিলাম তারে,
‘তোমার ঘরে সকল আলো জ্বেলে
এ দীপখানি সঁপিতে যাও কারে?
আমার ঘরে হয় নি আলো জ্বালা,
দেউটি তব হেথায় রাখো বালা।’
আমার মুখে দুটি নয়ন কালো
ক্ষণেক-তরে রইল চেয়ে ভুলে।
সে কহিল,’আমার এ যে আলো
আকাশপ্রদীপ শূন্যে দিব তুলে।’
চেয়ে দেখি শূন্য গগন-কোণে
প্রদীপখানি জ্বলে অকারণে।

অমাবস্যা আঁধার দুই পহরে
জিজ্ঞাসিলাম তাহার কাছে গিয়ে,
‘ওগো, তুমি চলেছ কার তরে
প্রদীপখানি বুকের কাছে নিয়ে?
আমার ঘরে হয় নি আলো জ্বালা,
দেউটি তব হেথায় রাখো বালা।’

অন্ধকারে দুটি নয়ন কালো
ক্ষণেক মোরে দেখলে চেয়ে তবে-
সে কহিল,’এনেছি এই আলো,
দীপালিতে সাজিয়ে দিতে হবে।’
চেয়ে দেখি লক্ষ দীপের সনে
দীপখানি তার জ্বলে অকারণে।

বোলপুর
২৫ শ্রাবণ ১৩১২