অনুমান

পাছে দেখি তুমি আস নি, তাই
আধেক আঁখি মুদিয়ে চাই-
ভয়ে চাই নে ফিরে।
আমি দেখি যেন আপন-মনে
পথের শেষে দূরের বনে
আসছ তুমি ধীরে।
যেন চিনতে পারি সেই অশান্ত
তোমার উত্তরীয়ের প্রান্ত
ওড়ে হাওয়ার ‘পরে।
আমি একলা বসে মনে গণি
শুনছি তোমার পদধ্বনি
মর্মরে মর্মরে।

ভোরে নয়ন মেলে অরুণ-রাগে
যখন আমার প্রাণে জাগে
অকারণের হাসি,
যখন নবীন তৃণে লতায় গাছে
কোন্‌ জোয়ারের স্রোতে নাচে
সবুজ সুধারাশি-
যখন নব মেঘের সজল ছায়া
যেন রে কার মিলন-মায়া
ঘনায় বিশ্ব জুড়ে,
যখন পুলকে নীল শৈল ঘেরি
বেজে ওঠে কাহার ভেরী,
ধ্বজা কাহার উড়ে-

তখন মিথ্যা সত্য কেই-বা জানে,
সন্দেহ আর কেই-বা মানে,
ভুল যদি হয় হোক-
ওগো, জানি না কি আমার হিয়া
কে ভুলালো পরশ দিয়া,
কে জুড়ালো চোখ!
সে কি তখন আমি ছিলেম একা?
কেউ কি মোরে দেয় নি দেখা?
কেউ আসে নাই পিছে?
তখন আড়াল হতে সহাস আঁখি
আমার মুখে চায় নি নাকি?
এ কি এমন মিছে?

বোলপুর
৪ আষাঢ় ১৩১৩