আমার হৃদয় প্রাণ
সকলি করেছি দান,
কেবল সরম খানি রেখেছি।
চাহিয়া নিজের পানে
নিশিদিন সাবধানে
সযতনে আপনারে ঢেকেছি।
হে বঁধু, এ স্বচ্ছ বাস
করে মোরে পরিহাস,
সতত রাখিতে নারি ধরিয়া,
চাহিয়া আঁখির কোণে
তুমি হাস মনে মনে
আমি তাই লাজে যাই মরিয়া!
দক্ষিণ পবন ভরে
অঞ্চল উড়িয়া পড়ে,
কখন্ যে, নাহি পারি লখিতে,
পুলক ব্যাকুল হিয়া
অঙ্গ উঠে বিকশিয়া,
আবার চেতনা হয় চকিতে!
বদ্ধ গৃহে করি’ বাস
রুদ্ধ যবে হয় শ্বাস,
আধেক বসন বন্ধ খুলিয়া
বসি গিয়া বাতায়নে
সুখসন্ধ্যা সমীরণে
ক্ষণতর আপনারে ভুলিয়া;
পূর্ণচন্দ্র কর রাশি
মূর্চ্ছাতুর পড়ে আসি
এই নব যৌবনের মুকুলে,
অঙ্গ মোর ভালবেসে
ঢেকে দেয় মৃদু হেসে
আপনার লাবণ্যের দুকূলে;
মুখে বক্ষে কেশপাশে
ফিরে বায়ু থেলা-আশে,
কুসুমের গন্ধ ভাসে গগনে,
হেন কালে তুমি এলে
মনে হয় স্বপ্ন বলে’
কিছু সার নাহি থাকে স্মরণে!
থাক্ বঁধু, দাও ছেড়ে,
ও টুকু নিয়ে না কেড়ে,
এ সরম দাও মোরে রাখিতে,
সকলের অবশেষ
এই টুকু লাজ লেশ,
আপনারে আধ খানি ঢাকিতে।
ছল ছল দুনয়ান
করিয়ো না অভিমান,
আমিও যে কত নিশি কেঁদেছি,
বুঝাতে পারিনে যেন
সব দিয়ে তবু কেন
সবটুকু লাজ দিয়ে বেঁধেছি,
কেন যে তোমার কাছে।
একটু গোপন আছে,
একটু রয়েছি মুখ হেলায়ে!
এ নহে গো অবিশ্বাস,
নহে সখা, পরিহাস,
নহে নহে ছলনার খেলা এ!
বসন্ত-নিশীথে বঁধু
লহ গন্ধ, সহ মধু,
সোহগে মুখের পানে তাকিয়ো!
দিয়ে দোল আশে পাশে,
কোয়ো কথা মৃদু ভাষে,
শুধু এর বৃন্তটুকু রাখিয়ো!
সে টুকুতে ভর করি
এমন, মাধুরী ধরি’
তোমা পানে আছি আমি ফুটিয়া,
এমন, মোহন ভঙ্গে
আমার সকল অঙ্গে
নরীন লাবণ্য যায় লুটিয়া,
এমন, সকল বেলা
পবনে চঞ্চল খেলা,
বসন্ত-কুসুম-মেলা দু’ধারি!
শুন বঁধু, শুন তবে,
সকলি তোমার হবে,
কেবল সরম থাক্ আমারি!
২৮ আষাঢ়, ১৩০০।