নিরালা

বর্তমানে মুক্তকচ্ছ, ভবিষ্যৎ হোঁচটে ভরা,
মাঝে মাঝে মনে হয়,
দুমুখ পৃথিবীকে পিছনে রেখে
তােমাকে নিয়ে কোথাও সরে পড়ি।
নদীর উপরে যেখানে নীল আকাশ নামে
গভীর স্নেহে,
শেয়াল-সঙ্কুল কোনাে নির্জন গ্রামে
কুঁড়ে-ঘর বাঁধি;
গরুর দুধ, পোেষা মুরগির ডিম, ক্ষেতের ধান;
রাত্রে কান পেতে শােনা বাঁশবনে মশার গান;
সেখানে দুপুরে শ্যাওলায় সবুজ পুকুরে
গরুর মতাে করুণ চোখ
বাঙলার বধূ নামে;
নিরালা কাল আপন মনে
পুরনাে বিষন্নতা হাওয়ায় বােনে।
একমাত্র তােমাকে সত্য বলে মানি।
দারুণ গ্রীষ্মে অভীপ্সা-ব্যাকুল মন
তোমার আদেশে শহরের দিগ্বিজয়ে ঘােরে
তােমার আদেশে সন্ন্যাসীর সাধনা-সঙিন দিনগুলি
যুবতী-সঙ্কুল আসরে
সান্ধ্য-সঙ্গীতে সংহত।
প্রভু, পৃথিবীতে তােমার লীলা অবিরাম,
এ্যাসেম্‌ব্লি-হলে বিরহছলে মিলন আনাে,
প্রবীণ কবির মুখে আবার আনাে
স্বদেশি গান

রাত্রির দূষিত রক্তে বিকলাঙ্গ দিনের প্রসবে
আমাদের তন্দ্রা ভাঙে;
তারপর আকাশ ভারি হয়ে ওঠে,
বিরস কাজের সুর
কতদিনের ক্লান্তিতে কলের বাঁশি বাজে;
পিছনে সমস্তক্ষণ ক্ষিপ্রগতি বাসের শব্দ।

পৃথিবীর কবিতার শেষ নেই:
দিনের ভাটার শেষে
গলিত অন্ধকারে মরা মাঠ ধুধু করে,
চরাচরে মরা দিনের ছায়া পড়ে।
উদ্দাম নদীতে শেষ খেয়া নেই,
শিকারী কীট সােনার ধানে।

তাই বঙ্কিম ব্ৰহ্ম যিশু পরমহংস
সময় যখন আসে তখন সকলি মানি,
দুর্গম দিন,
নামহীন অশান্তিতে বিচলিত বৃদ্ধি,
তবু সরল চরম কথাটি এই বলে মানি
ভারি ট্যাঁক ছাড়া কিছুই টেকে না,
সবার উপরে আমিই সত্য।
তার উপরে নেই।