বস্তুত গাছপাথর নেই

বস্তুত গাছপাথর নেই কোনো তার বয়সের,
তার কোনো নির্ধারিত বর্ণ নেই, নেই
সাজগোশাকের অভিন্নতা। কেউ শাদা, কালো কেউ,
কেউ পীত; কেউ-বা বাদামি অতিশয়।
তার কোনো সুনির্দিষ্ট জন্মস্থান নেই,
দ্বীপ কি বদ্বীপ
কিংবা মালভূমি, মরুভূমি, পাহাড়ি এলাকা, তুমি
যেখানেই যাও, সেখানেই পেতে পারো
পদচ্ছাপ তার, আর কী-যে মহিমার
তিলক ললাটে তার, মানুষ ভীষণ সম্মোহিত
নতজানু হয় তারই কাছে বারংবার।
সংহারের নেশা তাকে কেবলি মাতিয়ে রাখে, হাতে
উঠে আসে ভয়ংকর ভাঙার কুড়াল।

কোনো কোনো শীতে রটে, তার শবযাত্রা শুরু হবে
দ্বিপ্রহর বারোটায়, অথচ প্রকাশ্যে দেখা যায়
কচ্ছপের মতো বলিরেখাময় মুখ তার, চোখে
কিসের ঝলক।

তার মস্ত হাতের তালুর আশ্রয়ের
বাপক বাহারে
মানুষ সন্ত্রস্ত বড় সকল সময়, নিসর্গের খুব কাছে
পৌঁছেও কাটে না তার ভয়। নিভৃত উঠোন,
শান্ত কুটিরের কথা ভেবে শান্তি পেতে চায়,
কিন্তু চোখে ভেসে ওঠে বন্দি-শিবিরের কাঁটাতার,
কাঁটাতারে বিদ্ধ শাদা পাখি;
মেষপালকের মুখচ্ছবি ভেবে জল্লাদের মুখ দেখে ফেলে।

ফুলে স্তবকে কোনো প্ররোচনা নেই,
পক্ষান্তরে পৃষ্ঠপোষকতা আছে সুন্দরের,
অথচ নিমেষে সেখানেই বারে বারে দু’লে ওঠে
হাইড্রার মাথা।

তার বসন্তের, তার হেমন্তের স্তোত্র বরাভয়
আনে চরাচরে, তার করুণা অপার।
বুঝি তাই কতকাল গোঠে কেউ শোনেনি দুপুরে
কিংবা অপরাহ্নে কোনো রাখালের বাঁশি।
যেখানে প্রকৃতি তম্বী বেদিনীর মতো
সুঠাম, চিকন, কেউ যায়নি সেখানে কতকাল।
তার সমর্থনে খুব ধোঁয়াটে শ্মশানে
চণ্ডাল মাটির ভাঁড়ে আর্ত ওষ্ঠ রেখে খোয়ারিতে
অদৃশ্য স্তনের দিকে বাড়ায় বিশীর্ণ হাত আর
সুরছুট রাখালেরা ইদানীং পোষে শুধু নেকড়ের পাল।
বর্মাবৃত কৃষ্ণকায় ঘোড়সওয়ারের
উড়ন্ত পায়ের নিচে রাশি রাশি থাম, লোকালয় চুর্ণ হয়।

তার পদধ্বনি শুনে প্রতিটি গোলাপ
মৃত মাকড়সা হয়, আনন্দ-কাসিদা
কেবলি মর্সিয়া হয়ে যায়; সবাই বাড়ায় ভিড়
অজ্ঞতার বিবাহবাসরে!
অনেকেই উদ্যানের সন্ধানে বেরিয়ে ক্লান্ত পায়ে
ফিরে আসে ঘরে কালো কুকুরের মতো। মাঝে মাঝে
নৈরাশের তটে মাথা রেখে
জেগে উঠবার ভয়ে কেঁদে ওঠে ঘুমের ভেতরে।
কখনোবা সুতীব্র চিৎকারে ওরা আকাশ কাঁপিয়ে
মাইল মাইলব্যাপী রুদ্ধ খাঁচা থেকে
হঠাৎ বেরিয়ে যেতে চায়, জেনে নিতে চায় পথ তার কাছে,
যে নিজেই পথভ্রষ্ট খুব দিকচিহ্নহীনতায়।