দুঃখ স্বচ্ছন্দে আমাকে

দুঃখ স্বচ্ছন্দে আমার মাথার ঘ্রাণ নিয়ে বলে-
এই দ্যাখো, তোমার কপালে
রেখেছি আমার ওষ্ঠ।
এই স্পর্শ তোমার মধ্যে জাগিয়ে তুলবে
বাদশাহী আমলের ঝাড় লণ্ঠনের মতো স্মৃতিঃ
তুমি দেখবে মেরুন রঙের একটি বাড়ি
আর সেই বাড়িটার দরজায় দাঁড়িয়ে
কে যেন কাউকে খুঁজছে সর্বক্ষণ (একজন
মানুষ অন্য একজনকে খোঁজে চিরদিন)
রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। আয়নার অজস্র গুড়ো
পথে পথে ছড়িয়ে থাকবে;
একজন অন্ধ গায়কের বিশীর্ণ হাত ধরে
এক সুন্দরী, অথচ মুক, আস্তে সুস্থে
এগোতে থাকবে ভিড়ভাট্টায়।

তুমি দেখবে
কে একজন, না যুবক না কিশোর, বসে আছে খুব একলা,
উদাসীন তার অস্তিত্ব বেজে চলেছে অলৌকিক বাদ্যযন্ত্রের মতো।
তার পিঠে জ্যোৎস্নার আলখাল্লা;
তুমি দেখবে
সেই মরুবাসিনীকে, যার মুঠোয়
বন্দি তোমার পরমায়ু;
একটা গুহা তোমার চোখে পড়বে-যেখানে
সিংহের গা থেকে ক্রমাগত খসে পড়ছে
রাশি রাশি সোনালি ছাল।

এই যে তোমার দৃষ্টিপথে দুলে উঠেছে একটা গাছ,
ত্রিভুবনে অন্য কেউ তাকে দ্যাখে না,
তার নাম সবার অজানা।
তুমি শুধু তুমি দেখবে, জানবে।
তোমার চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়
অদূরে ফুটে আছে আশ্চর্য এক ফুল।
অন্য কেউ তা দ্যাখে না কস্মিনকালেও,
জানে না তার নাম।
তুমি শুধু তুমি দেখবে পাও,
শুধু তোমারই কণ্ঠে উচ্চারিত হতে পারে সে-নাম।

তোমার কপালে আমার ওষ্ঠের চিহ্ন
রয়েছে বলেই তোমার সান্নিধ্যে শিলাখণ্ড গান গায়,
পানির ডহরে নিশিপ্রহরে
দুলে ওঠে কখনো-না দেখা জলযান।
তোমার কপালে আমার গাঢ় চুম্বন
আছে বলেই তুমি দ্যাখো
কবরের নিচে সন্তের মুখের মতো
কোনো মুখাবয়ব, ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে ভেজা চুলের গুচ্ছ।

দ্যাখো আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম,
ঘরের কোণে মনহুশ অন্ধকারে ঘাড় গুঁজে
বসে থাকলে তোমার চলবে না,
বেরোতে হবে আমার হাত ধরে, পাশাপাশি।
তুমি বাইরে পা না বাড়ালেও পুবদিকে
উঠবে জ্যোতিশ্চক্র, কবরেও ফুটবে ফুল, গেরস্তের প্রাঙ্গণে
বাগ দেবে তরুণ মোরগ, হাঁস চঞ্চু ঘষবে পাখনায়,
রুটিবিজয়ী বেরোবে তার নিজস্ব ধান্ধায়।

এসো,
আমার হাত ধরে পা বাড়াও তুমি।