হে পক্ষী, হে বৃক্ষ

শৈশবের সোনালি দুপুরে আমি দেখেছি কত না
চিল আর শঙ্খচিল সুনীল আকাশে অসঙ্কোচে উড়ে উড়ে
ডানা থেকে ঝরিয়েছে আনন্দের কণা ক্ষণে ক্ষণে। কণাগুলো
কুড়িয়ে রেখেছি জমা স্মৃতির প্রবাহে
মজার ঠাকুরদার ঝুলি’ পড়বার ফাঁকে ফাঁকে আর
কখনও একটি ক্লান্ত চিল এসে বসেছে কাছের গাছটিতে।
হায়, আজকাল দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও একটি চিল আর
আসে না তো দৃষ্টিপথে, ভুলেও শুনি না
দুপুরের বুকচেরা চিলের সতেজ ডাক। দূর বাল্যকালে
এমনকি যৌবনেও নানাবিধ পাখি দেখা গেছে
এ শহরে, বারান্দার রেলিং-এ কত না পাখি এসে
বসেছে একদা চোখ আর মনমাতানো রঙের
চারু হাট বসিয়েছে অসঙ্কোচে। অথচ এখন
একটিও পাখি আর সহজে পড়ে না চোখে, যেন
ওরা গূঢ় অভিমানে এ শহর থেকে চিরতরে
নিয়েছে বিদায়। নগরের বিষবাষ্প
মানব, মানবশিশুদের ফুসফুস কি প্রবল
করেছে দখল, পাখিরাও সবুজের আশ্রয়বিহীন আজ।

বহুদিন থেকে ডানে বামে যাচ্ছে শোনা আর্তনাদ। কুঠারের
সন্ত্রাসের নির্দয়তা প্রসূত আওয়াজ আর বৃক্ষের ক্রন্দন
ভেসে আসে নিকট এবং দূর থেকে। দুর্বল ষাঁড়ের গাড়ি
টেনে নিয়ে যেতে থাকে পুরুষ এবং নারী-বৃক্ষদের লাশ!
প্রকৃতিকে বেপরোয়া হানছে আঘাত
মানবসন্তানগণ। হায়, বিবেচনায় হীনতায়
নিজেরাই নিজেদের করবে সংহার মহোৎসবে মেতে উঠে।
হে পক্ষী, হে বৃক্ষ, ক্ষমা কর আত্মধ্বংসী মানবের
ঠুলিঢাকা বিবেক, পতন আর ডাহা ভ্রষ্টাচার।

২৪.১১.২০০০