পাথরগুলো হবে ফুল

তুমি এসেছ, বড় ভুল সময়ে
এসে গ্যাছো তুমি।
বলব না, এই অসময়ে আসা
উচিত হয়নি তোমার;
ঘোর অবেলায় বিষ্ঠার স্তূপ
আর মান্ধাতার
পচা আবর্জনায় আবীর ছড়ায়
ঝলমলে রোদ, তবে কি তাকে
বারণ করার
কোনো অর্থ দাঁড়ায়?

তোমার দিকে অজস্র তীর
ছুঁড়ছে চৌদিক থেকে
কবন্ধ তীরন্দাজের দল,
তোমাকে ওরা তীর-জর্জরিত
দুলদুল বানিয়ে
হিংস্র উৎসবে মেতে উঠতে
চায়, রপ্তানি করতে চায়
ওদের উলঙ্গ জয়োল্লাস
বর্বরতার চূড়ায়। তোমার
অন্তর্লোকে
ওরা ছড়িয়ে দিয়েছে বিষাদের
মিশমিশে মেঘ।
যদি পারতাম এই নিষ্ঠুউরতম
দহনে
আমি তোমার জন্যে নিভৃতে
রচনা করতাম ছায়া,
যদি পারতাম তোমার
বুক-পিঠে বর্ম
এবং মাথায় শিরস্ত্রাণ হয়ে
ঝলসে উঠতাম, যদি
পারতাম।
আমার বড় সাধ হয়, তোমার
হৃদয়ের, মননের বিকাশমান,
সৃজনশীল ডালপালাকে মূঢ়
ক্রুর আগুন থেকে বাঁচিয়ে
রাখি।

না সরযু নদীর জল, না
ফোরাতের পানি-
কিছুই পারবে না তোমার
অন্তর্গত ক্ষতগুলো ধুয়ে দিতে।
আমি তোমার যাবতীয়
ক্ষতকে লাল গোলাপ বানিয়ে
দিতাম,
যদি পারতাম। আজ তুমি বড়
একা, যেদিকে তাকাও
সেদিকেই মুদ্রিত প্রগাঢ়
বেদনা। তোমার চোখ থেকে
অশ্রুজল ঝরলে পুড়ে যায়
করতল, দুব্বো ঘাস।
চৈত্রের রৌদ্রের মতো তোমার
গান ছড়িয়ে পড়ছে
নদীমুখে, খোলা রাস্তায়,
প্রান্তরে, দিগন্তে থেকে দিগন্তে।
কোনো নির্দিষ্ট জাত কিংবা
ধর্মের উদ্দেশে নয় তোমার
গান;
যে-গানে ধ্বনিত ভালোবাসার
মহিমা,
বিশ্বমানবের নিলনোৎসব।
তুমি জীবনের স্তব
রচনা করো বলেই ওরা
তোমার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে
মরণ-ফাঁস।
ভয় পেও না মূঢ়তার
প্রেতনৃত্য দেখে-
দ্যাখো, তোমার খুব কাছেই
সাদা আলখাল্লা পরে দাঁড়ানো
সোক্রাতেস,
তোমার বিষাদ তিনি সস্নেহে
মুছে দেবেন সত্যসন্ধ হাতে।
জানি, কষ্ট তোমার মর্মমূলে,
অথচ শিরদাঁড়া খাড়া সর্বক্ষণ;
তুমি ছাড়া কে লিখতে পারত
‘আয় কষ্ট ঝেঁপে জীবন
দেবো মেপে?

ঘাতকের দল ব্যানারে লিখছে
তোমার নাম
হিংসার হরফে,
তোমার কণ্ঠস্বরকে ওরা
লোমশ পা দিয়ে মাড়িয়ে
থেঁতলে দিতে চায়, অথচ
যে-পথ তাদের পদশব্দে
আজ সন্ত্রস্ত খরগোশের মতো
কম্পমান,
সে-পথ একদিন তোমার
কণ্ঠস্বরের জন্যে
উৎকর্ণ হয়ে থাকবে সর্বক্ষণ,
বুকে ধারণ করবে
তোমার জন্যে ভালোবাসার
গোলাপ। সূর্যমুখী হবে
ভবিষ্যৎ।

ভেব না একা তুমি। দূরের
আকাশ নেমে এসে
সঙ্গ দেবে তোমাকে, গাছপালা
আর নক্ষত্র
তোমার নির্জন, শূন্য
মুহূর্তগুলোকে কানায় কানায়
ভরিয়ে তুলবে
বিলাপ-তড়ানো সংলাপে।
তোমার দিকে
ছুটে আসবে তোমার হাজার
হাজার ভাইবোন
তোমার উদ্দেশে কাসিদা
গাইতে-গাইতে, নিক্ষিপ্ত
পাথরগুলো হবে ফুল।