বিএনপির সংসদে যাওয়া না-যাওয়া

গত ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের নতুন বছরের অধিবেশন শুরু হলো। এ রকম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন এবং তাঁর ভাষণের ওপর দীর্ঘ আলোচনা হয়। সরকারি দল ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব আনে। বিরোধী দলহীন সংসদে ধন্যবাদ, প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই হয় না। মাস খানেক আগে একটি জাতীয় দৈনিকে একটা খবর বেরিয়েছিল যে বিএনপি এবার প্রথম দিন থেকেই সংসদে উপস্থিত থাকবে, তা হয়নি। হবে না যে বোঝাই যাচ্ছিল। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারাও বলেন, সংসদে তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হয় না বলে তাঁরা সংসদে যান না। তবে, তার চেয়েও অবাক হওয়ার মতো যে কথাটা তাঁরা বলেন, তা হলো: সরকার চায় না, বিরোধী দল সংসদে যাক। অর্থাৎ বিএনপি সংসদে যায় না, কেননা, সরকার চায় না তারা যাক। সরকারকে তাহলে সাংঘাতিক মান্য করে দলটি। এ রকম বাধ্য একটি বিরোধী দল পেলে কোন সরকার আনন্দিত হবে না। বলুন, আর কোন সরকারই বা সেধে সেধে তাদের সংসদে যাওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাবে?

ঠিক যখন আমরা ধরে নিয়েছিলাম, এ সরকারের মেয়াদে বিএনপি লুই কানের ওই বিখ্যাত স্থাপনার চৌকাঠ আর মাড়াবে না। খবর এসেছে, এবার তারা যাবে। কিছুদিন আগে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হলো। তাতে হবিগঞ্জে বিএনপি জিতল। এ বিজয় দলটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিএনপি এবং বিএনপির সমর্থক পত্রিকাগুলো বলল, হবিগঞ্জে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও নিশ্চয়ই মোটামুটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। না, মোটেও না, সেখানে বিএনপি হেরেছে, কাজেই ব্যাপক কারচুপি হয়েছে, জনতার রায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, এ নির্বাচন মানি না, মানব না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চাই।

হরতালের মধ্য দিয়ে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ নির্বাচনের জবাব দেওয়া হবে। নির্বাচন জালিয়াতি অতীতের সব রেকর্ড (এই রেকর্ডে অবশ্য মাগুরা এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নেই) ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে অবশ্য বগুড়ায়ও উপনির্বাচন হয়েছে, ভোলায় হয়েছে। বগুড়ায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় প্রতিফলিত হয়েছে। ভোলায় ব্যাপক কারচুপি ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে সরকার ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন জনগণের রায় ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বগুড়ায় জিতলেন যেসব সাংসদ, তাঁদের সঙ্গে লুই কানের একটা দূরত্ব থেকেই গেল। হবিগঞ্জের নির্বাচিত প্রার্থীকেও মোটামুটি কান সাহেবের স্থাপত্য সুষমার সান্নিধ্যে আসা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে, এ রকমই ছিল আমাদের ধারণা, নির্বাচনের তিন দিন পরও। কিন্তু ডেইলি স্টার তার ২৯ জানুয়ারি সংখ্যায় শিরোনাম দিয়েছে ‘জাতীয় সংসদে বিএনপি আগুনঝরা প্রতিবাদের পরিকল্পনা করছে’। আগুনঝরা প্রতিবাদ নিশ্চয়ই মানিক মিয়া এভিনিউ বা জিয়ার মাজার থেকে হবে না। এ জন্য সংসদের ভেতরে ঢোকা চাই। ডেইলি স্টার জানাচ্ছে, ভেতরে ঢোকার পরিকল্পনাই করছে বিএনপি। দলটির এক বিজ্ঞ সাংসদ জানাচ্ছেন, ‘জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্য আমাদের সংসদে ফিরতে হবে।’ আরেকজন বলেছেন, ‘ম্যাডাম অনুমতি দিলেই আমরা যাব।’ কাগজটির মতে, বিএনপির সাংসদেরা ভাবছেন, জনগণের পক্ষে কথা বলার এখনই উপযুক্ত সময়।

বিএনপি সংসদে ফিরলে সবচেয়ে খুশি হবে দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ। মানুষ এখন রাস্তায় আন্দোলন চায় না। একটা সময় ছিল, যখন পুরো পল্টনপাড়া জনসভার দখলে থাকলেও শহরের কোথাও যানজট হতো না। এখন ঢাকা শহরের যানজট এমন এক খতরনাক অবস্থায় পৌঁছেছে যে মুক্তাঙ্গনে একটা ছোটখাটো দল জনসভা করলেও আশপাশে যানবাহনের চলাচলে জট লেগে যায়। মানুষ তাই মনেপ্রাণে চায় বিএনপি সংসদে যাক, সেখানে কথা বলুক, জনগণের পক্ষে নানা বিষয়ের আগুনঝরা প্রতিবাদ জানাক। দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলুক। যানজটে জান বেরিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য একটা উপায় বের করতে সরকারকে বাধ্য করুক। টেন্ডার সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক। যাঁরা ভোট দিয়ে বিএনপির সাংসদদের লুই কানের দালানে পাঠিয়েছেন তাঁরা যে রকম, যাঁরা ভোট দেননি তাঁরাও চান এসব সাংসদ সেই কাজগুলো করুন, যে কাজের জন্য তাঁরা গোড়াতেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। এই যে হবিগঞ্জে যিনি জিতলেন, তিনি যদি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বলতেন, ‘আমাকে ভোট দিয়ে জেতাবেন, কিন্তু আমি একবারও সংসদে যাব না (যদিও বেতন-ভাতা নেব!)।’ তাহলে তিনি নির্বাচিত হতেন কি না কে জানে। কিন্তু তিনিও নিশ্চয়ই ভোটারদের বলেছেন, ‘সংসদে গিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।’ সুতরাং এই সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই জনগণের পক্ষে কথা বলার ‘উপযুক্ত’ সময় শুরু হয়ে গেছে। এখন, এই দুই বছর পর যদি বিএনপির কোনো সাংসদ মনে করেন, না, উপযুক্ত সময়টা মাত্র এখনই এসেছে, তাহলে হয় তাঁর ‘উপযুক্ততা’ বিচারে একেবারে নিজস্ব কোনো বিবেচনা আছে অথবা বিবেচনার ঘাটতি রয়ে গেছে বা অন্য কোনো কারণ আছে। প্রশ্নটি এ জন্য ওঠে যে ঠিক এর আগের অধিবেশনে সরকার যে রকম বিএনপিকে কথা বলতে দেয়নি, সংসদে তাদের চায়ওনি, এ অধিবেশনেও নিশ্চয়ই তাই। এ দুই অধিবেশনের মাঝখানে এমন কিছু ঘটেনি, যা বিএনপিকে সংসদের দিকে ধাবিত করতে পারে। দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা অথবা বিদ্যুৎ আগে যা ছিল, এখনো তা-ই, বরং এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই সহনীয়, তাহলে?

এই ‘তাহলে’র উত্তর পাওয়ার জন্য ডেইলি স্টার-এর পুরো প্রতিবেদন পড়তে হয় না, এটি নিজ থেকেই ধরা দেয়, একটু আঙ্কিক চিন্তা করলে। অঙ্কটা সংসদে বিএনপির সদস্যদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির। কয়েকটি কাগজে কিছুদিন ধরে লেখা হচ্ছে, যদি এ অধিবেশনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের অন্যান্য সংসদ বর্জনকারী সদস্য যোগ না দেন, তাহলে তাঁরা তাঁদের সদস্যপদ হারাবেন। অঙ্কের হিসাবটা এ রকম: এ সংসদের অধিবেশন চলবে আরও ৪৩ দিন, বিরোধী দলের বর্জনকারী সদস্যরা সংসদে অনুপস্থিত আছেন ৪৯ দিন এবং আরও ৪১ দিন তাঁরা যদি একাদিক্রমে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে আর তাঁরা সংসদ সদস্য থাকবেন না। অর্থাৎ জনগণের পক্ষে কথা বলা এবং সরকারের নানা অন্যায়ের অগ্নিঝরা প্রতিবাদ জানানোর জন্য উপযুক্ত সময় এই ৪১ দিনের মধ্যেই এসে পড়বে। আমার একটা নিরীহ অনুমান আছে এবং সে অনুযায়ী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিএনপিসহ জোটের সাংসদেরা সংসদে যোগ দেবেন, তারপর কয়েক দিন জনগণের পক্ষে কথা বলবেন অথবা বলার চেষ্টা করবেন। তারপর সরকার যখন তাঁদের কথা বলতে দেবে না, তাঁরা আবারও সংসদের পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের জন্য লুই কানকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসবেন। সরকারও এতে আনন্দিত হবে, যেহেতু সরকার চায় না, বিরোধী দল সংসদে থাকুক। তারপর যা হবে, তাও আমার নিরীহ অনুমানে ধরা পড়ে এবং তা হলো রাজপথ উত্তপ্ত করে আগুনঝরা প্রতিবাদ। হরতাল-যেহেতু হরতালের সংস্কৃতির এখন পুনঃ উদ্বোধন হয়েছে। এই সংস্কৃতির একটি যৌক্তিক সম্প্রসারণ হচ্ছে লাগাতার হরতাল। আশা করি তাও হবে। পদত্যাগ চাই, করতে হবে অথবা পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না। এসবও নিশ্চয়ই হবে।

আমার অনুমানকে বেশি দূরে যেতে না দিয়ে একটি বিপরীত চিন্তা না হয় করি এবং তা হচ্ছে, সংসদে গিয়ে বিএনপিসহ জোটের অংশগ্রহণ স্থায়ী হওয়া। যদি বিএনপি আর সংসদ বর্জন না করে, সত্যি সত্যি জনগণের পক্ষে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে, তাহলে মানুষ তাকে সাধুবাদ জানাবে। যদি রাজপথের আন্দোলন (যার অর্থই হচ্ছে এখন অকারণ সহিংসতা, যার মারাত্মক পরিণতি বহন করা ঘুরে দাঁড়ানো এই দেশটির পক্ষে সম্ভব নয়) দূরবর্তী একটি পছন্দে পরিণত করে সংসদের ভেতরের আন্দোলনটা হয় জোটের প্রথম পছন্দ, তাহলে লাভটা যাবে জনগণের ঘরেই। সরকারের অনেক ভালো কাজ রয়েছে, অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে মানুষের ভাগ্য ফিরবে। কিন্তু এমন অনেক কাজ ও পরিকল্পনাও রয়েছে, যেগুলোতে বেশ কিছু ফাঁক রয়ে গেছে, হয়তো স্বচ্ছতারও অভাব আছে। সংসদে বিএনপি তথা জোট যদি তার কাজটি যথাযথভাবে করে, তাহলে এসব দূর হবে। বিএনপিতে প্রাজ্ঞ কয়েকজন সাংসদ রয়েছেন। আমি নিশ্চিত, রাজপথ ছেড়ে সংসদে থাকলে তাদের কথা শুনতে সরকার বাধ্য হবে। তাতে লাভটা বিএনপি-আওয়ামী লীগের নয়, হবে জনগণের। এতে আগামী নির্বাচনে বিএনপি তার হারানো অনেক আসনই পুনরুদ্ধার করতে পারবে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া পৌর নির্বাচনে দলটি ভালো করেছে। সংসদ নির্বাচনেও এমন একটি আসনে জিতেছে, যেটি ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের। এ অর্জনটি দলের জন্য বড় একটি সুসংবাদ। অথচ এর ওপর ভিত্তি করে আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কারচুপির অভিযোগ এনে হরতাল ডাকা হলো। ২৯ তারিখে খালেদা জিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে বসলেন। এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার মতো প্রজ্ঞা দলটি দেখাতে পারল না। এটি সত্যি দুঃখজনক। হরতাল মানুষ পছন্দ করে না। এটি এখন প্রতিবাদের নয়, মানুষের চূড়ান্ত দুর্ভোগের ভাষা। যেখানে দলটির উচিত ছিল কারচুপি ইত্যাদি প্রমাণ তুলে ধরে বিষয়টি জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়া, সেখানে ‘জনগণের পক্ষে’ কথা বলতে আগ্রহী দলটি জনগণের ওপর এক সীমাহীন দুর্ভোগ চাপিয়ে দিল। গত নির্বাচনে দলটি হেরেছিল তার পশ্চাদমুখী কিছু চিন্তা, পদক্ষেপ এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস ইত্যাদি জোগান দিতে সীমাহীন ব্যর্থতার জন্য; ব্যাপক দুর্নীতি এবং অপশাসনের জন্য। এবার একটা সুযোগ দলটির সামনে এসেছে হারানো অবস্থানটি ফিরে পাওয়ার। নানা ব্যর্থতা ও দুর্নীতি এখন প্রধান সমস্যা নয় দলটির, যেহেতু ক্ষমতায় দলটি নেই। কিন্তু পশ্চাদমুখী চিন্তা, যুদ্ধাপরাধের প্রশ্নে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দেওয়া, মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং জ্বালাও-পোড়াও ও হরতালের রাজনীতি করলে মানুষ দলটিকে আরেকটি সুযোগ নাও দিতে পারে। মহাজোট সরকার যদি আগামী তিন বছরে গ্যাস-বিদ্যুতের সমাধান করে ফেলে, দ্রব্যমূল্য একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সমর্থ হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানে নিষ্পন্ন করতে পারে, স্টক মার্কেটকে একটা স্বাস্থ্যবান অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, টেন্ডার-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, নানা উড়াল পুল-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি করে বড় দুই শহরের যানজট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রাজপথ চার রাস্তার করে সেখানেও যাতায়াত সহজ করতে পারে, পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য বড় কিছু স্থাপনা করে দেয়, তাহলে জনগণ মহাজোটকেই আবার ভোট দেবে। মানুষ ভোটের সময় স্বস্তিতে থাকলে তিন বছরের আগের কষ্ট বেমালুম ভুলে যায়।

বিএনপিকে তাই সংসদে থাকতে হবে। এবং এমন একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে হবে, যা কথায় কথায় পদত্যাগ দাবি করে না, বরং ছোটখাটো ত্রুটি সহ্য করে বড় লাভের দিকে যায়। আমার বিবেচনায় (দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্র এবং রাজনীতি পর্যবেক্ষকের মতে) গত পৌর নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের দুটি উপনির্বাচন ছিল যথেষ্ট স্বচ্ছ, পক্ষপাতমুক্ত ও অবাধ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আমার এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলেও মনে হয়। আমরা তো বিচারপতি আজিজের নির্বাচন কমিশন দেখেছি। বাংলাদেশ যে সামনে এগোচ্ছে- শিক্ষা, অর্থনীতি, জননীতি সব ক্ষেত্রে- বর্তমান নির্বাচন কমিশন তারই প্রমাণ। একে সহায়তা দিলে লাভটা হবে গণতন্ত্রের।

তবে বিএনপিসহ জোটের সদস্যরা যাতে সংসদে থাকেন, ক্রমাগতভাবে থাকেন, এটি দেখার দায়িত্ব সরকারি দলেরও। সে জন্য তাঁদের কথা বলতে দিতেই হবে। তাঁরা সমালোচনা করলে তাঁদের মাইক বন্ধ করলে চলবে না। তাঁদের মাইক বন্ধ করলে তাঁরা যে অমায়িকভাবে বসে পড়বেন, তা নয়। শুধু শুধু কার্য সম্পাদনে সমস্যা হবে। তাঁদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীকে করা তাঁদের প্রশ্ন শুনতে হবে। স্পিকার মহোদয়ের উচিত, সংসদের প্রথম সারিতে আরও দুটি আসন বিএনপিকে ছেড়ে দেওয়া। দলটির প্রতি সাম্প্রতিক জনসমর্থন এ দাবিকে দৃঢ় করেছে। এবং যে বিষয়টি খুব বিনয়ের সঙ্গে তুলে ধরা উচিত তা হচ্ছে, সংসদে ব্যবহূত ভাষার প্রতি যত্নশীল হওয়া। সে ভাষা যেন ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আক্রোশের না হয়। সে ভাষা যেন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

বিটিভির কল্যাণে সংসদের অধিবেশন মানুষ দেখে, রেডিওতে শোনে। এখন সংসদ টিভিও এসেছে। ফলে মানুষ সাংসদদের প্রতিটি আচরণ দেখে এবং দেখবে। সরকার ও বিরোধী দলকে বিচার করবে। ভোটের দিন এক বড় অংশের ভোটার তাঁদের অভিমত জানাতে ভোটকেন্দ্রে যান, যাঁরা কোনো দলের সমর্থক নন। তাঁরাই ‘ক’ অথবা ‘খ’কে ক্ষমতায় আনেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যাঁরা সংসদে ও সংসদের বাইরে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, তাঁরাই ভবিষ্যতে জিতবেন। এখন দেখা যাক, বিএনপি সংসদে যায় কি না যায়। এবং গেলে কত দিন থাকে। কারণ, সংসদে বিএনপির থাকা না-থাকার ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনীতি।

প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১১।