ঈদের কবিতা

চাঁদ রাতে কাল সুদূর দিগন্তরে
জেগেছিল বাঁকা খঞ্জরে আঁকা
রূপালি স্বপ্ন মোর,
খুশীর মউজে নীল আকাশের নীড়ে
সিতারার তারে ছিঁড়েছিল কাল
হতাশার আঁধি ঘোর,
মোরাকাবা ছেড়ে সেহেলি আকাশ
আবেগে শিহরি উঠি’
বলেছিল বুঝি: আলবিদা রমজান;
রিদওয়ান জেগে দেখেছিল জান্নাতে
খুশীর অফোট কুঁড়ি তুলে মালা
গাঁথে হুর গেলমান।

ফিরদৌসের সব্জা বাগের মাঝে
ফুটেছে সে ফুল বিচিত্র রংগিন,
তারি ছোঁওয়া লেগে আজ এ মাটির বুকে
এসেছে অচেনা আরেক নতুন দিন।

আজ ঈদগাহে নেমেছে নতুন দিন,
চিত্তের ধনে সকলে বিত্তবান,
বড় ছোট নাই, ভেদাভেদ নাই কোন;
সকলে সমান- সকলেই মহীয়ান!

জরিন জরির খোলস হ’ল যে
হার মেনে পলাতক!
সে-ই আশরাফ- সেরা যার ইবাদত!
আতরাফ যারা এই ঈদগারে ছেড়ে
জাহান্নামের আগুনে খুঁজুক কম্পিত শরাফত।

আজ ঈদগাহে নেমেছে সে দিন
প্রশান্ত অম্লান,
ভ্রাতৃত্বের তারে সুর বেঁধে নিয়ে
কা’বার খাদিম ধরেছে নতুন গান

আলো-ঝলমল সফেদ ঊষার তীরে
জেগেছে মানুষ;- জেগেছে সারা জাহান।

এই দিন মোরা ভাগ ক’রে নেব সকলেই এক সাথে,
এ দিনেরে মোরা ভাগ করে নেব সকলেই অকৃপণ
ফিরদৌসের স্বপ্নের সওগাত
আজ কোনখানে মানবে না বন্ধন।

এ দিনের আলো মানবে না বাধা কোন মৃত প্রান্তরে,
স্বার্থান্ধের অন্ধ প্রাচীরে হারাবে না গতিবেগ,
মুঠি মুঠি আলো ঝ’রবে খুশীর সকল ঝরোকা থেকে
মুর্দা দিলেও আনবে আবার প্রাণের বন্যাবেগ,
দুর্গম পথে দিয়ে যাবে তার প্রাচুর্য অফুরান
আবে-কওসরে শতদল সম এই দিন অম্লান।
দেখ সিয়ামের সাধনার দাহে উঠেছে এ ফুল ফুটে
প্রতি পাপড়িতে আঁকা আছে এর আশিকের আঁখিজল,
খোশবুতে যার মৌমাছি মন লুটায় পক্ষপুটে,
অপরূপ রূপে মখলুকাতের বুক হয় উচ্ছল।

জান্নাত এর রঙ দেখে লোভাতুর,
সাত আসমানে ফেরেশতা উন্মন,
এই ঈদগাহে যে মিলাবে হাতে হাত
পাবে সে হৃদয়ে অখুয়াত-বন্ধন।

মরক্কো থেকে ম্যানিলা অবধি পাবে সে বুকের মাঝে
কুল মুমীনের জামা’ত সে মহীয়ান,
নীহারিকালোকে লক্ষ তারার মাঝে
উঠবে আবার আল আহাদের গান;
মিস্মার করে জামানার বিষ নিঁদ
জাগবে আবার প্রোজ্জ্বল তওহিদ।
মহান প্রেমের আশ্বাসে দেখ উজ্জ্বল এই দিন
জাগে বিচিত্র শতদল সম উল্লাস রংগিন।

গৃধ্রু কারুণ, হিসাবের খাতা ভোল,
এই ঈদগাহে সকলের সাথে খুশীর ঝাণ্ডা তোল;
তিরিশ রাতের সাধনা যে মনে রেখে গেছে স্বাক্ষর
তার সাথে এসে গুলজার কর এ খুশীর বন্দর।

সব অসাম্য-পাহাড়চূড়ায়
এই প্রাণ অভিযান
সাম্য-ন্যায়ের, ভ্রাতৃত্বের
দিক নয়া ফরমান।।