ভােকাট্টা ঘুড়ি

ইচ্ছে করছে তালদিঘি মাঠে গােলাপপদ্ম খেলি
একবার বড় নেড়েচেড়ে দেখি দূরতম শৈশব
ইচ্ছে করছে কিশােরীর ঝাক পায়রার মতাে উড়ে
মল্লিকা বনে মেতে উঠি নেচে অপেনটো বায়স্কোপ।

ইচ্ছে করছে লাল ফ্রক পরে সারাটা শহর ঘুরি
চাঁদনি রাতের ঘুমপাড়ানিয়া গান শুনে ঘুম যাই,
ইচ্ছে করছে দাড়িয়াবান্ধা কোট কেটে ডাকি আয়
আয় দিনভাের রােদে বৃষ্টিতে ধুলাে মেখে গায়ে খেলি
দল বেঁধে কেঁদে রাঙাপাড়-শাড়ি পুতুলের বিয়ে দিই
জীবনের সব ঝুলকালি মুছে একবার শিশু হই
হই চই করে বৃষ্টিতে ভিজি, দু’হাতে কুড়ােই আম
তেঁতুলে লবণ মাখিয়ে গাছের মগডালে গিয়ে উঠি।

ইচ্ছে করছে উঠোনের কোণে এক্কাদোক্কা খেলি
বিকেলে হাডুডু, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, সন্ধ্যায় যােলােগুটি,
ইচ্ছে করছে দুধভাত খেয়ে ভূতের গল্প শুনি
বাঁশঝাড়ে কোনও পায়ের শব্দে লাফিয়ে উঠব ভয়ে।

ইচ্ছে করছে কড় কড় করে বজ্র উঠুক ডেকে
গুটিশুটি মেরে বুকে থুথু দিয়ে কাঁথায় লুকোব মুখ,
তিন মানুষের মাথা কাটা আর পায়ে কথা কয় সেই
ফটিং টিং-এর ভয়ে নদীতীরে একলা যাব না আর।

গুলাই লাটিম মার্বেলগুলাে বালিশের নীচে রেখে
স্বপ্ন দেখব আকাশে ওড়াই সবুজ লেজোলা ঘুড়ি,
ইচ্ছে করছে ঘুড়ির মতন ডানা মেলে দিয়ে উড়ি
ঠোটে করে কিছু নীল নেব তুলে উদ্দাম উল্লাসে
এখনও আকাশ ডাকেনি সকল নীলের নিলাম জানি,
শৈশব যদি একবার আমি ফিরে পেতে চাই খুব
মানুষ আমাকে কুটি করবে, আকাশ তাে দেবে নীল।

(গ্রন্থঃ নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে)