জলছবি

দর্পণের কাছে আর কোনদিন নিবিষ্ট হয়ো না
মসৃণ এ প্রতিবম্ব বড়বেশী সত্যভাষী হয়।
লুকানো বয়স যেন ধরা পড়ে, ধরা পড়ে যায়
সহসা সাজানো রেখা তুঙ্গ করা তোমার মাধুরী।
আমরা যা ধরে রাখি সোজা করে রাখি যে সুষমা
রেশমী ফিতেয়-বেঁধে, দৃঢ় হস্তে, স্পুঞ্জে, কর্সেটে
বাঁধন না থাকলে যা একটুখানি দাঁড়াতে জানেনা
সারি সারি ঠেস দেয়া কাঠামোর অর্পিত আদল
যতই কোমল ভাবো, আসলে ভাস্কর জানে তার
চিহ্নের আড়ালে আছে একখণ্ড গরীব পাথর;-
কুটিল কৌশলে শুধু শিল্পী থাকে পটের আড়ালে
অর্থাৎ সমস্ত বুঝি গরিমার গোপনে গর্হিত
প্রবল ইচ্ছায় শুধু ধরে রাখা কদর্য দুষ্কৃতি!

যেও না জলের কাছে, যে সব নদীতে ঢেউ নেই
কাঁপেনা পানির প্রান্ত তেমন তিতাসে যাও যদি
সে যে আরও ভয়াবহ, আর্শি যেন তরল ত্রিশিরা
ফোটাবে কলস কাঁখে অতি মৃদু কম্পিত তোমাকে!

কেমন শীতল লাগে নীলাম্বরী জলে ভিজে যায়!
যেন কার বউ তুমি পড়ন্ত বয়সী মাতা যেন
ধুলোর খেলায় লিপ্ত নগ্ন দু’টি অবোধ শিশুর
অথবা ফিরতে হবে ঘড়া নিয়ে ভাদুগড় গাঁর
তারিক মীরের এক খড়ে ছাওয়া স্বপ্নের গহ্বরে।
যেমন ধবলী ফেরে পরিতৃপ্ত সন্ধ্যায় গোয়ালে
কিম্বা হঁকোর কড়া খক খক কাশির গমক
পানির প্রভাবে যদি বেজে ওঠে কি হবে তখন?

তাই বলি, ঢেউ তোলো, কলস ডুবিয়ে দাও জলে
ভেঙে দাও সব রেখা, প্রতারক পানির প্রভাবে
মুহূর্তে যা সত্য বলে অতিশয় প্রতিভাত হলে
তোমার শরীর কাঁপে অবয়ব দৃঢ়তা হারায়-
কাজল ভিজিয়ে নামে কালিময় নয়নের নদী
রোদনরেখার নামে ডাকে যারে গ্রামের মেয়েরা।