ঈস্ট্ রিভার

(ইয়র্ক হাসপাতালে)

পূর্বী নদী,
যন্ত্রণার ঝাপসা রাত্রে প্রগাঢ় শিরায় অন্তঃশীল
তুমি বও একধারা অশ্রুজল,
অনিদ্রার তলে-তলে হাড়ে
অতলান্ত সমুদ্রের স্পর্শ আনো মোহানায়,
ডুবে যাওয়া
মান্হাটানের পাশে।
লক্ষ বাসনার রাঙা দাহ দপ্‌দপ্
আলোর প্রলেপ উল্কি মুছে-মুছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে অন্তর্লীনা
তুমি
বাৰ্বিটালের ঘুমে প্রান্তে জাগো শ্যাম স্রোতধ্বনি
প্রশমিত শয্যাঘরে।
একা শুয়ে মগ্ন মনোবেগে দূরগামী
হারাই তোমার জলে খণ্ড বেলা, চূর্ণ কথা, লুপ্ত খেয়াঘাট,
ব্যর্থ ঘূর্ণি, যত ছিন্ন দোকানের পণ্যসারি ইচ্ছাভরা,
তীরে-তীরে
নিয়ন্ আলোর শঙ্কা।
ট্যাক্সি শব্দ পৌঁছে শান্ত হয়,
অন্ধকারে
তীব্ৰজ্বলা লাল রাস্তা, দ্রুত গলি, প্রগল্ভ বিদ্যুৎঝরা ছোটে
ব্রড্‌ওয়ের ন্যুইয়র্ক, নিশাচর,
তাও ছোঁও টেপা-সুইচের
হঠাৎ তিমির দোলে।
ধীর রক্তগতি সর্বময় সমতানে
বিলয় নিথরে ঢাকো শূন্য শেষ শীর্ষ মুষ্টিতোলা
এম্পায়ার স্টেট্,
উঁচু-নিচু পরিবার, ব্যবসায়ী সৌধ দৈত্য-
নাগরিক।
হঠাৎ প্রকাণ্ড ভার নেমে যায়।
রেডিয়ো-ফেনানো
বিজ্ঞাপিত শব্দস্তুপ ক্ষীণ মূর্ছা মেশে লুপ্ত কানে।
উর্ধ্বে তারা
ওঠে,
কাঁপে নিচু প্রতিফলিতের স্রোতে,
তরল প্রবাহ আয়নায়
ঝকঝকে ধ্রুব যুগ্মতায় সারারাত্রি।
সত্তা স্রোত, পূর্বী নদী,
হাসপাতালের ঘরে সাততলা ভুঁয়ে আনে ঘরের উদ্দেশ,
আরোগ্য অরুণোদয়।
ভোর ভাঙে। আগুন তোমার ঠাণ্ডা জলে
নতুন আয়ুর সূর্য।
ভারি চোখ ভরা চায় পাশে বারান্দায়,-
রবার-চাকার গাড়ি, কফি নিয়ে নার্স আসে
প্রশস্ত সকালে অন্যদিনে;
নীল পর্দা খোলে যেই, ধীরে-ধীরে
তুমি দূরে সরে যাও প্রাণনীতা,
পূর্বী নদী,
চলচ্ছবি ঐ জানলা পাশে
প্রাত্যহিক, স্টিমারের বাঁশি-বাজা।
ওদিকে উঠোনে বাস্ থামে
নাম-লেখা চলন্ত কপাল। ব্যস্ত যাত্রী। আরেক জীবন্ত বেলা।।