দুই পূর্ণিমা

জানি না কেন সে-কথা মনে পড়ে।
শ্রাবণ-রাতে প্লাবন এলে
পূর্ণিমার ঝড়ে।
ঝরিছে আলো আকাশে, যেন
মৌন সিনেমার
স্বপ্ন-নীল চন্দ্রালোকে
মগ্ন চারিধার।
মৃদু মেঘের লজ্জা ছিলো,
বাতাসে ছিলো মধু,
বক্ষে ছিলো লক্ষ যুগের বঁধু।
নয়ন ভরা অনিদ্রায়
শ্রবণ ভরা বাণী,
লিখেছিলাম আপন মনে
কবিতা একখানি।
ছিলো না দ্বিধা, ছিলো না বাধা,
ছিলো না আয়োজন,
সহজে খুশি হ’তে-না-জানা
সমালোচক-মন।
আত্মহারা বেগে যেমন
ঝর্নাধারা ছোটে,
লেখনী-মুখে আখরগুলি
তেমনি দ্রুত ফোটে।
বয়স ছিলো সতেরো সেই দিন,
ইচ্ছা দিয়ে শুধেছি নব-
যৌবনের ঋণ।
সুখের মোর ছিলো না শেষ,
দুঃখে ছিলো মধু,
বক্ষে ছিলো চিরকালের বঁধু।
তারই পরশ বিশাল নীল
নিশীথে যেন মেশে।
কবিতাখানি লিখেছিলাম
কত-না ভালোবেসে।

কেন-যে সেই কবিতা পড়ে মনে
আশ্বিনের আকাশ হ’তে
শিউলি-বরিষনে।
আবেশহারা বাতাসে আর
আবেগহার মেঘে
ঈষদলস সফলতার
শান্তি আছে লেগে
মুহূর্তের মূর্ত রূপ
শিশির ঝ’রে যায়
সান্ত্বনার তন্দ্রা এনে
মনের দরোজায়।
প্রৌঢ় এই পূর্ণিমার
স্তব্ধ অবসরে
জানি না কেন সে-কথা মনে পড়ে।
কবে-যে সেই কবিতা হ’লো
ধূলিতে অবনতা,
ভুলিতে তবু পারিনি তার
অসীম মদিরতা।
কী-কথা সব লিখেছিলাম
কে আর মনে করে,
লিখেছিলাম, এ-কথাটাই
হৃদয় আছে ভ’রে।
কবিতা গিয়ে রহিলো জেগে
কবিতা-লেখা রাত,
আনন্দিত অনিদ্রার
উদার ছায়াপাত।
বয়স এলো চল্লিশের কাছে,
সতেনোতর সে-রাতি যেন
এখনো বেঁচে আছে।
এখনো সেই স্বপ্ন-নীল
পূর্ণিমার নেশা
বক্ষে মোর দিতেছে দোল,
রক্তে আছে মেশা।
স্মরণে তার আশ্বিনের
সীমান্ত-শান্তিরে
আবার যেন শ্রাবণ দিলো
আশঙ্কায় ছিঁড়ে-
সে-রাত নয়, সে-চাঁদ নয়,
স্মৃতির ভার শুধু;
তবু কি নেই, আজও কি সেই
চিরকালের বঁধু?