মধ্যবয়সের প্রার্থনা

যে-অল্প আমার আছে, সেই স্বল্প সর্বস্ব আমার;
সব যদি স্বল্প হয়, সে-অল্পের বেশি নেই আর।
তোমারে তা দেবে ব’লে দিনে-দিনে অশান্তির দূত
করেছে প্রস্তুত।

কত স্মিত মুহুর্তেই মনে হ’লো, কিছু নেই বাকি;
দুঃখের প্রহারে জেগে দেখেছি, লুকায়ে ছিলো ফাঁকি।
কিছু হাতে রেখে দিতে বানিয়ে নিয়েছে ছল-ছুতা
দুর্বল ভীরুতা।

যেখানে সর্বস্ব প্রাপ্য, সেখানে তিলার্ধ যদি খসে,
যা-কিছু দিলাম, তা-ই মূল্যহীন হয় সেই দোষে।
তাই আমি আজও গনি ব্যর্থতার আবর্তের ঢেউ
অনেক দিয়েও।

আমার সর্বস্ব যদি স্বল্প হয়, সব সে তবু-তো;
তারও নেই সর্বস্বের বেশি, যার ঐশ্বর্য প্রভূত।
আন্তরিক এ-গণিতে অল্প তাই অমিতপ্রতিম;
সামান্য, অন্তিম।

অনেক এখানে শূন্য, ন্যূনতম একান্ত চরম,
শূন্য আর ভগ্নাংশের মূল্যভেদ মারাত্মক ভ্রম।
এ-ভুল উন্মূল ক’রে হতাশার হাতে তুমি কাড়ো
আরো, আরো, আরো।

তবুও দিইনি সব; বন্দী দেহে অন্ধতার দ্বিধা
এখনও বিচার করে অনাচারী সুযোগ-সুবিধা।
কবে আর নিঃস্বতার স্বৈরিতায় ছিন্ন হবে বেড়ি!-
আর কত দেরি।

যে-স্বল্প আমার আছে, সে-অল্পের সর্বস্ব তোমার,
সব যদি স্বল্প হয়, সর্বস্ব ব’লেই মূল্য তার।
রাত্রিদিন শান্তিহীন বাজে, শোনো, আমার বীণায়-
‘নাও, নাও, নাও।’

কী দীর্ঘ অপেক্ষাকাল! কী কঠিন তোমার শপথ!
বাঁচায় বঞ্চিত যত, তত আমি তোমারই সম্পদ।
দিনে-দিনে জীবনেরে রিক্ত ক’রে দাও-যে বিদায়
দেহের দ্বিধায়।

তা-ই, তবে তা-ই হোক! যৌবনের মতোই ঝরুক
অপলাপী অনুকম্পা, অপ্রতিভ-ভীত দুঃখ-সুখ।
যে-আমি তোমার হাতে, তারে আর প্রাকৃত করুণা
কোরো না, কোরো না।

আঘাতে-আঘাতে আমি তোমারে-তো জেনেছি দুর্বার;
আর নয় অনুক্রম, হানো আজ সার্বিক উদ্ধার।
ভুলায়ো না শূন্য-সম অংশেরে একটু ক’রে বড়ো;
করে, পূর্ণ করো।

করে শুষ্ক, শুষ্কতর জীবনেরে; বাণীর নটীকে
মগ্ন করো চৈতন্যের নগ্নতার ভীষণ স্ফটিকে;-
তবে যদি সর্বশেষ-সর্বস্ব-স্বল্পেরে দিতে পারি
নিঃশেষে নিঙাড়ি’।