আমার পাঁচ বছরের মেয়ের ব্যর্থতায়

তোমাকে সুন্দর লাগে, রাজহাঁস; তোমাকে সুন্দর লাগে,
নীলপদ্ম! তুমি আছো এটা এক অসম্ভব সুখ- আমি ঋণী তোমার মুখের কাছে,
ওই ওষ্ঠ, কালো চোখ, তোমার বাহুর কাছে, যার আলিঙ্গনে
আমি স্বপ্ন দেখি বুক জুড়ে। তুমি আছো, তাই ঋণী হয়ে আছে মেঘ, নদী,
বনের সমস্ত পাখি, একটি সম্পূর্ণ পৃথিবী। তুমি আছো ব’লে
পরিপূর্ণ হয়ে আছে ভয়ানক শূন্য এই গরিব গ্রহটি।
তুমি আছো- নীলপদ্ম, রাজহাঁস- এটা সভ্যতার বিরাট সাফল্য।
তুমি জানো সব কিছু রূপময় তোমার হাসির মতো, তোমার হাসিতে
মেঘ ঘিরে বোনা হয় চিকন রুপোলি পাড়, তোমার চোখের
জলে লাশের মুখেও লাগে অলৌকিক সুন্দরের ছাপ। তুমি জানো না সাফল্য
কাকে বলে, কিন্তু তোমাকে ঘিরে সব কিছু সফলতা পায়
পূর্ণিমার চাঁদের মতোই। পাঁচ বছর বয়সেই তোমাকে পৃথিবী মন্ত্রণা দিচ্ছে
নিজ হাতে নিতে নিজ ভার;- নিজ হাতে তুমি তুলে নিয়েছিলে
তোমার পৃথিবী, কিন্তু তুমি ব্যর্থ হয়েছে;- ওরা তোমাকে ব্যর্থ ব’লে
ঘোষণা করেছে;- আর তুমিহঠাৎ উঠেছে হয়ে পৃথিবীর
সমান বয়সী, পৃথিবীর সমস্ত যন্ত্রণা জমেছে তোমার এক টুকরো বুকে।
তোমার যে- মুখে চাঁদ ছাড়া কিছুই ছিলো না, সেখানে জমেছে
যন্ত্রণার অন্ধকার; গতকালও তোমার অশ্রু ছিলো মুক্তোবিন্দু, কিন্তু ব্যর্থতা
তোমার অশ্রুকে করেছে অগ্নিগিরির মতো ভয়াবহ। অশ্রুর আগুনে
তুমি পুড়ে যাচ্ছো পাঁচ বছরের নীলপদ্ম, পাঁচ বছরের শুভ্র রাজহাঁস!
এ-প্রথম তুমি দুঃস্বপ্ন দেখেছো, পৃথিবী ও মানুষকে ঘৃণা
করতে শিখেছো- ব্যর্থতা মানুষকে একদিনে ভয়ঙ্কর জ্ঞানী ক’রে তোলে।
তুমি আজ প্রাতোর সমান জ্ঞানী, রবীন্দ্রনাথের সমান অভিজ্ঞ।
এই সৌরলোক আর তোমার নিকট আগের মতোন
কখনো থাকবে না- মেঘে তুমি দেখতে পাবে বজ্র, গোলাপে কন্টক!
পাঁচ বছরের নীলপদ্ম, রাজহাঁস, মিটিমিটি তারা, পাঁচ বছর বয়সে তোমার
জন্ম হলো- ব্যর্থতায়- তুমি ভুলবে না ব্যর্থতাই সুন্দরের অন্য নাম।
জেনে রেখো নীলপদ্ম, রাজহাঁস, এ-মাটিতে তোমার মতোই ব্যর্থ
ওই মেঘ, শাদা চাঁদ, এখানে ভীষণ ব্যর্থ অনন্ত সুন্দর।