ঢাকায় ঢুকতে যা যা তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে

বাঁশবাগানের চাঁদের নিচের কিশোর, তোমার স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে গেছে এ-নরক
চরপড়া নদীর বুকের যুবক, তোমার বুকের ভেতর জেগে উঠেছে এ-নরক
বাশি-হারানো সবুজ রাখাল, তোমার কাতর সুরের ভেতরে বেজে উঠেছে এ-নরক
তুমি বাঁশবন ভুলে পা বাড়িয়েছো নরকের দিকে
তুমি ঢেউয়ের দিকে পিঠ ফিরিয়ে পা বাড়িয়েছে নরকের দিকে
তুমি মাঠের মায়া উপেক্ষা ক’রে পা বাড়িয়েছো নরকের দিকে
নরকের হাতছানিতে ঝনঝন ক’রে উঠেছে তোমার রক্ত
নরকের গালের আভায় ঝলমল ক’রে উঠেছে তোমার স্বপ্ন
নরকের ডাকে লেলিহান হ’য়ে উঠেছে তোমার সুর
তুমি পা বাড়িয়েছে ঢাকার দিকে
তুমি তোমার স্বপ্নকে মেলে দিয়েছে ভয়াবহ নরকের দিকে
তুমি পা বাড়িয়েছে ঢাকার দিকে
তুমি তোমার ভবিষ্যৎকে সমর্পণ করেছো আত্মাহীন নরকের হাতে
তুমি পা বাড়িয়েছে ঢাকার দিকে
তুমি তোমার জীবনকে বন্ধক রেখেছে ক্ষমাহীন নরকের কাছে
নরককে চিরকাল স্বর্গের থেকেও সুখকর মনে হয়
নরকের মুখে থাকে সবচেয়ে সুন্দর মুখোশ
নরককে চিরকাল সবচেয়ে আলোকিত অঞ্চল ব’লে মনে হয়
তুমি ভাবছো ঢাকার পথে পথে নাচছে তোমার ভবিষ্যৎ
তুমি ভাবছো ঢাকার আকাশে উড়ছে তোমার স্বপ্ন
তুমি ভাবছো ঢাকার মিনারে মিনারে বাজছে তোমার জীবন
তুমি নরককে মনে করেছে স্বর্গ
তুমি আগুনকে মনে করেছো আলোক
তুমি ধাঁধাকে মনে করেছে রহস্য
তুমি জানো না ঢাকা এখন নরকের থেকেও ভয়াবহ
তুমি জানো না ঢাকা এখন নেকড়ের থেকেও হিংস্র
তুমি জানো না ঢাকা এখন কর্কট রোগের থেকেও অচিকিৎস্য
ঢাকা এখন চার লাখ আঠারো হাজার পাঁচ শো বদমাশের নগর
ঢাকা এখন তিন লাখ আশি হাজার লম্পটের নগর
ঢাকা এখন পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার তিন শো প্রতারকের নগর
ঢাকা এখন দুই লাখ বিশ হাজার পতিতার নগর
ঢাকা এখন দুশ লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার তিনশো ভণ্ডের নগর
ঢাকা এখন তোমাকে আর কিছুই দিতে পারে না
ঢাকার হাত থেকে তুমি আর কিছুই নিতে পারো না
তুমি পা বাড়িয়েছে ঢাকা অভিমুখে
তোমার জন্যে খোলা পুব দিকে, তুমি ঢুকতে পারো পুব দিক দিয়ে
তোমার জন্যে খোলা দক্ষিণের সঁকো, তুমি ঢুকতে পারো দক্ষিণ দিয়ে
তোমার জন্যে খোলা উত্তর দিক, তুমি ঢুকতে পারো উত্তর দিয়ে
তোমার জন্যে খোলা পশ্চিম, তুমি ঢুকতে পারে পশ্চিম থেকে
তুমি ঢুকতে পারো যে-কোনো দিক দিয়ে
নরকে প্রবেশে কখনোই পথের কোনো অভাব হয় না
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে এক লাখ বিশ হাজার লুব্ধ পণ্যনারী
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে চার লাখ আঠারো হাজার পাঁচ শো বদমাশ
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে তিন লাখ আশি হাজার তিন শো প্রতারক
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে পাঁচ লাখ চল্লিশ জার্জার তিন শো প্রতারক
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে পথে পথে স্মিতহাস্য শয়তানের মুখ
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে রাশিরাশি বিকৃত পোস্টার
যে-দিক দিয়েই তুমি ঢোকো
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে দেয়ালের অর্থহীন অশ্লীল লেখন
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে না অমল বাতাস
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে না বৃষ্টির কোমল বর্ষণ
তোমাকে অভ্যর্থনা জানাবে না ঘাসের নিশ্বাস
তোমার হৃৎপিণ্ড নিয়ে খেলবে পণ্যনারীরা
তোমার মুণ্ডু নিয়ে খেলবে আততায়ীরা
তোমার স্বপ্ন নিয়ে খেলবে বদমাশেরা
তোমার স্বপ্ন নিয়ে খেলবে শয়তানেরা
তুমি জ্বলতে থাকবে নরকের দাউদাউ ক্ষমাহীন অশ্লীল আগুনে
বাঁশ বাগানের চাঁদের নিচের কিশোর, তুমি পা বাড়িয়েছে নরকের দিকে
চরপড়া নদীর বুকের যুবক, তুমি ঢেউয়ের দিকে পিঠ ফিরিয়ে পা বাড়িয়েছে
নরকের দিকে
বাঁশি-হারানো সবুজ রাখাল, তুমি মাঠের মায়া উপেক্ষা ক’রে পা বাড়িয়েছো
নরকের দিকে