লজ্জা

আমি জানি, সে তার প্রতিকৃতি কোনোদিন ফটোতে দেখেনি,
আয়নায়, অথবা সন্দ্বীপে বসে যেরকম
সর্বনাশা সমুদ্র দেখা যায়, তার জলে
মুখ দেখে হঠাৎ লজ্জায় সে শুধুই ম্লান হতো একদিন।

আমি জানি পিঠ থেকে সুতোর কাপড়
কোনোদিন খোলেনি সে পুকুরের জলে, লজ্জা,
সমস্ত কিছুতে লজ্জা; কণ্ঠে, চুলের খোঁপায়, চোখের তারায়।
আমি জানি আসন্নপ্রসব-অপরাধে, অপরাধবোধে
স্ফীতোদর সেই নারী কী রকম লজ্জাশীলা ছিল।

অথচ কেমন আজ ভিনদেশী মানুষের চোখের সমুখে
নগ্ন সে, নির্লজ্জ, নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে
জলাধারে পশু আর পুরুষের পাশে শুয়ে আছে।
তার ছড়ানো মাংসল বাহু নগ্ন,
কোমর, পায়ের পাতা, বুকের উত্থানগুলো নগ্ন,
গ্রীবার লাজুক ভাঁজ নগ্ন; -কে যেন উন্মাদ হয়ে
তার সে নিঃশব্দ নগ্নতায় বসে আছে।
তার সমস্ত শরীর জুড়ে প্রকৃতির নগ্ন পরিহাস,
শুধু গোপন অঙ্গের লজ্জা ঢেকে আছে
সদ্য-প্রসূত-মৃত সন্তানের লাশ।

তার প্রতিবাদহীন স্বাধীন নগ্নতা বন্দী করে এখন
সাংবাদিক, ঝুলন্ত ক্যামেরা নিয়ে ফটোগ্রাফার
ফিরে যাচ্ছে পত্রিকার বিভিন্ন পাতায়। অসহায়,
সূর্যের কাফনে মোড়ানো আমার বোনের মতো এই লাশ
আগের মতন আর বলছে না, বলবে না:
‘আমি কিছুতেই ছবি তুলবো না…।’

যেন তার সমস্ত লজ্জার ভার এখন আমার।
কেবল আমার।