জীবনচরিতাংশ

সকল সম্পর্ক ছিঁড়ে গেলে ভেঙে গেলে সব যোগাযোগ
প্রতিজ্ঞা গভীর স্মৃতি মধ্যরাতে অন্ধকারে আমি জন্ম নিই।
জনকের সঙ্গে তখন অষ্টাদশী জননীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
জনকের ফ্ল্যাট ছেড়ে জননী নতুন ফ্ল্যাটে উঠে গেলে
আমি জন্ম নিই। জন্মের সঙ্গেই
আমি ও জননী উঠে গেছি ভিন্ন বিছানায়।

চারদিকে ঘর ভাঙে ফ্ল্যাট ওঠে হোটেল মোটেলে
ভ’রে যায় বাঙলাদেশ
বাঙলার মেয়েরা সব গান গায় নেচে যায়
সাততলা হোটেলের প্রমোদখানায়।


অভিসারে যাবো ব’লে বেরিয়েছি রাস্তায়
কস্তুরীর অঙ্গুলিসংকেত আজো বিপর্যয় নিয়ে আসে
আমার সমস্ত বনে বাগানে সৈকতে
আমার গাড়ির সামনে শুধু মিছিলপ্রবণ জনতার দল
এসে বাধা দেয়, ঝকঝকে নতুন মডেলের গাড়ি
অকস্মাৎ পথরোধ করে,
আমি কি করবো আমি ওভারটেকিং জানি না।

সব বাধা পিছে ফেলে চৌরাস্তায় এসে দেখি সবুজ সিগনাল
হয়ে গেছে সর্বনাশী লাল
মুহূর্ত মিনিট ঘণ্টা মাস যায়
লাল দাগ কোনো দিন সবুজ হবে না
কোনো দিন হবে না সবুজ

‘পাবনার রঙিন শাড়ি ভয়ঙ্কর মসৃণ কোমল’,
ব’লে গেলো যে-ছাত্রী কী যেনো ওর নাম?
পারসেনটেজে ওর কি দরকার? ওর নামে প্রাণ পায়
আর্টস ফ্যাকালটির ১৬০ জন শিক্ষক।

আমার লেটারবক্স উৎকণ্ঠিত হয়ে আছে
একটি নীল খামের প্রত্যাশায়। সব চিঠি ব্যাগে নিয়ে
পালিয়েছে সবুজ পিয়ন নীল নক্ষত্রের দিকে।
তার সাইকেল
ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে ডাকবিভাগের সীমানা পেরিয়ে।

সম্রাজ্ঞী তোমার স্তব ছাড়া কোনো গান নেই স্বর্গে মাটিতে
তোমার স্নানের পর বাথরুম কী রকম সেন্টে ভ’রে থাকে
তোমার হাতের তালু থেকে আলো
আর চন্দ্রের অবিনাশী চন্দন ঝ’রে যায়
বিপর্যস্ত আকাশের সুনীল শয্যায়।


আমার নামফলক আজো সাঁটা হয় নি দেয়ালে।
দেয়ালে গাঁথতে চাই, জীর্ণ হয়ে ঝ’রে যায় সমগ্র দেয়াল।
হে আমার নামফলক আঁধারে ধাতুর জ্যোৎস্না
প্রাণধারণের হৃৎপিণ্ড
কোন দেয়ালে গাঁথবো তোমাকে?
রাজরোষ দৈবরোষ সারাক্ষণ শাসাচ্ছে তোমাকে
বারবার ঘরবদল সত্ত্বেও তোমাকে আজো রেখেছি অম্লান
তবু তুমি নিরুপায় নির্বাসিত থাকবে চিরদিন


বাঙলাদেশ বদলে যাচ্ছে, ফোর্টউইলিয়ম কলেজ যেদিন
গদ্য লিখলো সেদিন থেকেই
ঈশ্বরগুপ্তের মৃত্যু ক’রে দিচ্ছে মধুসূদনের জন্মসংবাদ রটনা
রবীন্দ্রনাথ ১০০, ০০০ বার জন্ম নিলেন
বাঙলাদেশ বদলে যাচ্ছে
ঋতুবদলের সব চিহ্ন ঝুলে আছে
গাছে গাছে মেয়েদের ধাতব শরীরে

আমার প্রৌঢ়া মা ভোর না হতেই চলে যান টেলিফোন একচেঞ্জে
কনিষ্ঠা বোন সেই ভোরে লিপস্টিক রুজ মেখে
বের হয় ফিরে আসে মধ্যরাতে, ফিরে আসে কিনা
তাও জানি না।

আজো বাঙলার যে-সব মেঠোপথ বাকি আছে
সেই সবে আরো পাঁচটা পাঁচসালা পরিকল্পনার পর
ট্রেন যাবে
হুইশালে কাঁপিয়ে
কিষাণের ঘর উঠে যাবে, উঠবে হোটেল
প্রতিদিন নতুন স্লিপ নিয়ে সেইখানে ঢুকবে কিষাণ,
পরস্পরের প্রতি আমাদের আর কোন আবেদন নেই
মেয়েদের যৌনাবেদন ছাড়া আর কোনো আবেদন নেই
তাহলে ফসল ফলবে কার জন্যে বলো?