যতোবার জন্ম নিই

যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
ঠিক করি শত্রু হবো, মানুষের, হবো শয়তানের চেয়েও চক্রান্তকুশল।
গণতন্ত্রের শত্রু হবো, প্রগতি-সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে থাকবে চিরকাল।
প্রকাশ্যে করবো স্তব জনতার, গোপনে তাদের পিঠে
অতর্কিতে ঢোকাবো ছোরা: উল্লাসে হেসে উঠবো প্রগতির সমস্ত পতনে।
যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
ঠিক করি জুতো হবো স্বৈরাচারী- চেঙ্গিশ বা অন্য কোনো- একনায়কের।
তার পায়ে সেঁটে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উঠবো ওপরে,
বলবো, ‘স্বৈরতন্ত্র ছাড়া মানুষ আর সভ্যতার কোনো বর্তমান-ভবিষ্যৎ নেই।’
বলবো, ‘চিরকাল অস্ত্রই ঈশ্বর।’
প্রতিক্রিয়াশীল হবো হাড়েহাড়ে, হৃৎপিণ্ড বেজে যাবে,
‘আমি প্রতিক্রিয়াশীল। আমি প্রতিক্রিয়াশীল।’

যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
ঠিক করি অত্যন্ত বিনীত হবো, মাথাটাকে তুলতেও শিখবো না।
মেরুদণ্ড খুলে ছুঁড়ে দেবো আঁস্তাকুড়ে, ওই বিপজ্জনক অস্থি
অসাবধান মুহূর্তে উদ্ধতভাবে তুলে ধরতে পারে বিনীত মস্তক।

যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
ঠিক করি হবো ধর্মান্ধ জঘন্যতম, পারলৌকিক ব্যাবসা ফেঁদে
রঙিন বেহেশ্‌ত্ তুলবো দুনিয়ায়। বলবো, বিধাতাই পুঁজিবাদী।’
বলবো, ‘তিনি স্বৈরাচারী; গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র তাঁর বিধানে নিষিদ্ধ।’
শোষণে হব পরাক্রম; বলবো, ‘শোষণই স্রষ্টার শাশ্বত বিধান।’

যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
ঠিক করি হবো রাজনীতিবিদ: জনতার নামে জমাবো সম্পদ।
জাতির দুর্যোগে পালাবো নিরাপদ স্থানে, সুসময়ে ফিরে এসে
পায়রার মতো খুঁটে খাবো পাকা ধান। কোন্দলে ভাঙবো দল,
হবো বিদেশি এজেন্ট- সারা দেশ বেচে দেবো শস্তায় বিদেশি বাজারে।

যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
ঠিক করি আমলা হবো, ঝকঝকে জীবন কাটাবো! বনানীতে বাড়ি করবো,
গাড়ি চড়বো চিরকাল। মাসিক বেতন, ঘুষ, কালোবাজারিতে
কাটবে জীবন। কোনো পাকা প্রতিক্রিয়াশীলের রূপসী কন্যাকে স্ত্রী ক’রে
ঘরে রাখবো, বাইরে ফষ্টিনষ্টি ক’রে যাবো বন্ধুপত্নীদের সাথে।
স্ত্রী চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আমলাদের ঐতিহ্য অনুসারে অধস্তন
কোনো আমলার যুবতী বউকে ভাগিয়ে তুলবো ঘরে
শুরু করবো কামের জ্বলজ্ব’লে রঙিন উৎসব।

যতোবার জন্ম নিই ঠিক করি থাকবো ঠিকঠাক-
কিন্তু প্রত্যেক জন্যে আমার জন্যেই থাকে রূঢ় রাস্তা আর ফাঁসিকাঠ।