কারে অভিমান

কারে অভিমনি হায়রে পরাণ জীবনের সাহারায়,
কারো ব্যথা কেউ ভাবিয়া দেখিতে সময় নাহিক পায়।
যার পাছে পাছে ফিরিলি কঁদিয়া,
সে ত কভু তোরে দেখে না চাহিয়া;
শুধু মিছে গান গাঁথিয়া গাঁথিয়া, বাড়ালি বুকের জ্বালা;
আপনারি হাতে গাঁথিয়া পরিলি দহন-নাগের মালা।

পরের পরাণ লইয়া উহারা করিতেছে ছেলেখেলা,
ভালবাসা-বাসি উহাদের কাছে আপন হাতের ঢেলা।
ওরা জানে রাঙা মুখের মায়ায়,
নিখিল ধরে পায়ে দলা যায়;
তোর অভিমান, কি আসে তায়,- তোরি মত শত শত
ওদের একটু কৃপার লাগিয়া পথে পড়ে আছে কত।

জীবনের দাম উহাদের কাছে একটু শুষ্ক হাসি,
একটু চাহনি- তারি বিনিময়ে ভালবাসা রাশি রাশি।
একটু করুণা, একটু আদর,
ওরা জানে তার কতটা কদর;
মানুষেরে লয়ে নাচায় বাঁদর, ওরা তার বিনিময়ে;
ছিনিমিনি খেলা করিতেছে নিতি পরের পরাণ লয়ে।

উহাদের হাটে উহারাই রাজা, নিয়ম তাহার এই,
বিনামূলে যাহা বিকাইতে পার,- কিনিতে ক্ষমতা নেই।
যদিই কখনো করুণা করিয়া,
কারো কাছে কিছু ফেলে বা বেচিয়া;
হাতে না লইতে যায় তা ভাঙিয়া, দুধের ফেনার মত,
বাহিরে তাহারে যতটা দেখায় আসিলে নয়কো তত।

হাটেতে উহারা বেসাতী করিছে বেলোয়ারী চুড়ী লয়ে,
ক্রেতারা আসিয়া ভীড় করিয়াছে মাণিকের বোঝা বয়ে।
একটু সে কথা, “আমি ভালবাসি,
তারি মোহে গেছে কত প্রাণ ভাসি,
মুকুল রতন কত রাশি রাশি, পড়েছে চরণ তলে;
ওরা যা দিয়েছে কর্পূর মালা, ধরিতেই গেছে গলে।

কাজ নাই তোর- কাজ নাই ওরে, এ হাটে দোকান বাঁধি,
মিছে কেন আর কাঁদিয়া বেড়াস মানুষের মন সাধি?
এমন পাগল কে আছে কোথায়
নদী-সোঁত সনে মিতালী পাতায়?
মানুষের মন তারো বেগে ধায়; পিছু ডাক নাহি শোনে।
-কভু কি কোথায় পিরীতি করেছে মানুষে মানুষ সনে?

তবু যে তাহারে ভুলিতে পারিনে আয় তবে মাটি লয়ে,
তারি মত এক মাটির মানুষ গড়ে লই দেবালয়ে;
মাটির দেবতা লবে পূজাভার
নাই যদি লয়, হেলা নাই তার;
আসিবে না কভু পায়ে দলিবার, জীবনেরে অকাতরে
মাটির মানুষ গড়িয়া তাহারে পূজিব মাটির ঘরে।

হায়রে পরাণ- মাটির পরাণ। কোথায় জুড়াবি দুখ,
এমন দরদী কোথা কিরে নাই স্নেহে ভরা যার বুক;
আকাশে বাতাসে হেন কোন ঠাঁই,
পথের দোসর কেহ কিরে নাই;
এত ভালবাসা কারে দিয়ে যাই- কারে গলাগলি ধরি,
শূন্য বেনুর এতগুলি ফাঁক গানে গানে দিই ভরি।