সফল সন্ধ্যা

সন্ধ্যা এখন আবছা মেঘেতে রঙে রঙে ধরে ধরে,
নক্সি কাঁথাটি বুনট করেছে অতি সুনিপুন করে।
এমন সময় তুমি এলে হেথা, ও বাড়ির জানালায়,
মেয়ে-ফুলগুলি হাসি খুশিভরা, কে আর ওদিকে চা’য়।
কলতলে কোন রূপসী বসিয়া মাজিছে বাসনগুলি,
কাঁচের চুড়ি যে আহলাদে নাচে বাহুর বরণে ভুলি।
এসব আজিকে মুলতুবি ঠাক, তুম এলে মোর ঘরে,
ভালই হইল, সময় কাটিবে কথা কওয়াকওয়ি করে।

তুমি এলে আজ, অঙ্গে বাঁকায়ে এনেছ ইন্দ্রতীর,-
হাসিতে ছুঁড়িছ বরণে বরণে যত ফুল ধরণীর।
আজিকার দিনে তোমারে হেরিয়া বহু কিছু করা যায়,
ও রাঙা হাসির পাখায় উড়িয়া আকাশের কিনারায়,
চলে যাওয়া যায়, সেই যে হাসিরে ধরিয়া রেখার জালে,
চির-জনমের করে রাখা যায়, আমাদের এই কালে।
বাঁশীর বাতাসে ও অযর ফুল হতে রাঙা দলগুলি,
মেলে দেখা যায় তাহার উপরে কথার ভোমর তুলি
-আরো পারা যায়, ও দেহ ধনুতে যত ফুল-শর-বালি,
আমরা এ বুকে ধরে দেখা যায় কি করে তাহারা আসি।
কত যে লীলার কমল ফুটাবে আঘাতি আংলার শরে।
এতে কি আমার অপরাধ হবে? তুমি বড় সুন্দর,
ওই মন্দিরে যে পরাণ সে ত আরও সুন্দরতর।
ও অধর আর ওই রাঙা হাসি, ওই ফুল তনুখানি,
অনাহুত কোন রাগিণীতে যেন আমারে ফিরিছে টানি।
এত ভাল লাগে এ দেহ তোমার, সেথায় যে প্রাণ থাকে,
সেকি একবার সাড়া দিতে নারে ভালবাসি এই ডাকে।
ও রাঙা ঠোঁটের কালো তিলটির ভোমর পাখার পরে,
সেকি ওই কথা উড়াতে পারে না আজিকে আমার তরে।

এমন উদার তুমি কি কখনো হইতে পারনা হায়,
একদিন তবে যদি দেহখানি মোরে ধার দেওয়া যায়।
তবে আমি রচি ওই দেহ দিয়ে এমনি শান্তি নিড়,
ধু ধু মরু ঘেরা আশা-ভাষাহীন এই ধরণীর তীর।
পান্থ পাখীড়া সেইখানে আসি খুলিয়া মনের দুখ,
সারাটা রজনী জাগিয়া পাবে প্রকাশের সুখ।
ওই দেহ তবে মুকুর করিয়া ঝুলাব আকালটায়,
বিরহীরা তাতে ধরিয়া দেখিবে যার যার বেদনায়।
ওই দেহ তবে বাঁশরী করিয়া বাঁধিব তমাল ডালে,
জগতের কত শূন্যতা আনি জড়াব সুখের জালে।
এই ধরণীর রূপ-পিয়াসীরা তাহাতে নিশাস ভরি,
না পাওয়ার ব্যথা কত যে তীব্র দেখিবে পরখ করি।