১৩৩৩

তোমার শরীর-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার- তারপর- মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্ দিকে জানিনি তা- হয়েছে মলিন
চক্ষু এই; ছিঁড়ে গেছি- ফেঁড়ে গেছি- পৃথিবীর পথে হেঁটে হেঁটে
কত দিন-রাত্রি গিয়েছে কেটে!
কত দেহ এল- গেল- হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দিয়েছি ফিরায়ে সব- সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
বসে আছি- সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে প্রিয়া!
তোমার শরীর-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার- তারপর- মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্দিকে- ফলে গেছে কতবার,
ঝ’রে গেছে তৃণ!

আমারে চাও না তুমি আজ আর, জানি;
তোমার শরীর ছানি
মিটায় পিপাসা
কে সে আজ!- তোমার রক্তের ভালোবাসা
দিয়েছ কাহারে!
কে বা সেই!- আমি এই সমুদ্রের পারে
বসে আছি একা আজ- ঐ দূর নক্ষত্রের কাছে
আজ আর প্রশ্ন নাই- মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে
চক্ষে তার- এলোমেলো রয়েছে আকাশ!
উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা!- তারই তলে পৃথিবীর ঘাস
ফলে ওঠে- পৃথিবীর তৃণ
ঝরে পড়ে- পৃথিবীর রাত্রি আর দিন
কেটে যায়!
উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খলা- তারই তলে হায়!

জানি আমি- আমি যাব চলে
তোমার অনেক আগে;
তারপর, সমুদ্র গাহিবে গান বহুদিন-
আকাশে-আকাশে যাবে জ্ব’লে
নক্ষত্র অনেক রাত আরো,
নক্ষত্র অনেক রাত আরো!-
(যদিও তোমারও
রাত্রি আর দিন শেষ হবে
একদিন কবে!)
আমি চলে যাব, তবু, সমুদ্রের ভাষা
রয়ে যাবে; তোমার পিপাসা
ফুরাবে না- পৃথিবীর ধুলো মাটি তৃণ
রহিবে তোমার তরে- রাত্রি আর দিন
রয়ে যাবে- রয়ে যাবে তোমার শরীর,
আর এই পৃথিবীর মানুষের ভিড়।

আমারে খুঁজিয়াছিলে তুমি একদিন-
কখন হারায়ে যাই- এই ভয়ে নয়ন মলিন
করেছিলে তুমি!-
জানি আমি; তবু, এই পৃথিবীর ফসলের ভূমি
আকাশের তারার মতন
ফলিয়া ওঠে না রোজ- দেহ ঝরে- ঝরে যায় মন
তার আগে!
এই বর্তমান- তার দু’ পায়ের দাগে
মুছে যায় পৃথিবীর ‘পর,
একদিন হয়েছে যা- তার রেখা, ধুলার অক্ষর!
আমারে হারায়ে আজ চোখ ম্লান করিবে না তুমি-
জানি আমি; পৃথিবীর ফসলের ভূমি
আকাশের তারার মতন
ফলিয়া ওঠে না রোজ-
দেহ ঝরে, তার আগে আমাদের ঝ’রে যায় মন!

আমার পায়ের তলে ঝরে যায় তৃণ-
তার আগে এই রাত্রি-দিন
পড়িতেছে ঝরে!
এই রাত্রি, এই দিন রেখেছিলে ভরে
তোমার পায়ের শব্দে, শুনেছি তা আমি!
কখন গিয়েছে তবু থামি
সেই শব্দ!- গেছ তুমি চলে
সেই দিন- সেই রাত্রি ফুরায়েছে বলে!
আমার পায়ের তলে ঝরে নাই তৃণ-
তবু সেই রাত্রি আর দিন
প’ড়ে গেল ঝরে!-
সেই রাত্রি- সেই দিন- তোমার পায়ের শব্দে রেখেছিলে ভরে!

জানি আমি, খুঁজিবে না আজিকে আমারে
তুমি আর; নক্ষত্রের পারে
যদি আমি চ’লে যাই,
পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই
যদি আমি-
আমারে খুঁজিতে তবু আসিবে না আজ;
তোমার পায়ের শব্দ গেল কবে থামি
আমার এ নক্ষত্রের তলে!-
জানি তবু, নদীর জলের মতো পা তোমার চলে-
তোমার শরীর আজ ঝরে
রাত্রির ঢেউয়ের মতো কোনো এক ঢেউয়ের উপরে!
যদি আজ পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই,
যদি আমি চ’লে যাই
নক্ষত্রের পারে-
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

তুমি যদি রহিতে দাঁড়ায়ে!
নক্ষত্র সরিয়া যায়, তবু যদি তোমার দু’ পায়ে
হারায়ে ফেলিতে পথ-চলার পিপাসা!-
একবার ভালোবেসে- যদি ভালোবাসিতে চাহিতে তুমি সেই ভালোবাসা।
আমার এখানে এসে যেতে যদি থামি!-
কিন্তু তুমি চ’লে গেছ, তবু কেন আমি
রয়েছি দাঁড়ায়ে!
নক্ষত্র সরিয়া যায়- তবু কেন আমার এ-পায়ে
হারায়ে ফেলেছি পথ-চলার পিপাসা!
একবার ভালোবেসে কেন আমি ভালোবাসি সেই ভালোবাসা!

চলিতে চাহিয়াছিলে তুমি একদিন
আমার এ পথে- কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন।
জানি আমি, আমার নিকটে তুমি এসেছিলে তাই।
তারপর, কখন খুঁজিয়া পেলে কারে তুমি!- তাই আস নাই
আমার এখানে তুমি আর!
একদিন কত কথা বলেছিলে, তবু বলিবার
সেইদিনও ছিল না তো কিছু- তবু সেইদিন
আমার এ-পথে তুমি এসেছিলে- বলেছিলে কত কথা,-
কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন;
আমার নিকটে তুমি এসেছিলে তাই;
তারপর, কখন খুঁজিয়া পেলে কারে তুমি- তাই আস নাই!

তোমার দু’ চোখ দিয়ে একদিন কতবার চেয়েছ আমারে।
আলো-অন্ধকারে
তোমার পায়ের শব্দ কতবার শুনিয়াছি আমি!
নিকটে-নিকটে আমি ছিলাম তোমার তবু সেইদিন-
আজ রাত্রে আসিয়াছি নামি
এই দূর সমুদ্রের জলে!
যে নক্ষত্র দেখ নাই কোনোদিন, দাঁড়ায়েছি আজ তার তলে!
সারাদিন হাঁটিয়াছি আমি পায়ে-পায়ে
বালকের মতো এক- তারপর, গিয়েছি হারায়ে
সমুদ্রের জলে,
নক্ষত্রের তলে!
রাত্রে, অন্ধকারে!
-তোমার পায়ের শব্দ শুনিব না তবু আজ- জানি আমি,
আজ তবু আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

তোমার শরীর-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার- তারপর, মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন।
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্দিকে জানি নি তা- হয়েছে মলিন
চক্ষু এই- ছিঁড়ে গেছি- ফেঁড়ে গেছি- পৃথিবীর পথে হেঁটে-হেঁটে
কত দিন-রাত্রি গিয়েছে কেটে!
কত দেহ এল, গেল,- হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে
দিয়েছি ফিরায়ে সব- সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
ব’সে আছি- সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে প্রিয়া!